দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা সেজে প্রতারণার সময় পাপিয়াকে সোমবার দুদক কার্যালয় আটক করেছে দুদক। উত্তরার ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ আলীর অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়।
মোহাম্মদ আলী জানান, আমার ভাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিলো একটি চক্র। পাপিয়া তার অন্যতম। চাঁদা না দিলে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের নোটিশ পাঠানোসহ বিটিভিতে রিপোর্ট করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়।
পাপিয়ার সঙ্গে দুদকেরই এক কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যোগসাজশ না থাকলে পাপিয়া কীভাবে সেই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন?’
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে মোহাম্মদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে দুদকের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন পাপিয়া আক্তার। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় দুদকের উপ-পরিচালক জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে তাকে আটক করা হয়।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গতকাল (রোববার) বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার পরিচয়ে মাতিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি রাত আটটায় ফোন করে বলেন, দুদকের এক কর্মকর্তা আপনাকে ফোন করবে। আমি তার কাছে সেই কর্মকর্তার ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, দুদক কর্মকর্তাই আপনাকে ফোন করবে। রাত দশটার দিকে এক মহিলা আমাকে ফোন করে কাল (সোমবার) দেখা করতে বলেন। তার কথামতো সোমবার আমি দুদকে তার সঙ্গে দেখা করতে আসি। এসে তাকে (পাপিয়া আক্তার) ফোন করি। তিনি সচিবলায়ে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে পাপিয়া আক্তার আমাকে ফোন করে ১৫ মিনিটের মধ্যে দুদকে দেখা করতে বলেন। আমি ঠিক সময়ে দুদক কার্যালয়ে এসে রিসিপশনে অপেক্ষা করি। বিকেলের দিকে ফোনে তিনি আমার অবস্থান জেনে দুদকের রিসিপশনে আসেন। আমার সামনেই তিনি বেশ কয়েকজনকে ফোন করেন। কিছু সময়ের মধ্যেই দুই-তিনজন লোক চলে আসে আমাদের সামনে। এ সময় পাপিয়া আমাদের নিয়ে দুদকের মূল ভবনের ৪র্থ তলায় ৪০৮ নং কক্ষে প্রবেশ করেন। সেই কক্ষে বসা দুদক কর্মকতার কাছে আমার ভাইয়ের নামে দুদকে দুর্নীতির কোনো মামলা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপা (পাপিয়া) আপনাকে সবকিছু বলে দেবেন। আমি তার নাম জানতে চাইলে তিনি নাম জানাননি।’
মোহাম্মদ আলী জানান, প্রথম থেকেই তার কাছে সবকিছু পরিষ্কার না হওয়ায় পূর্ব পরিচিত দুদকের এক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানান। তিনি বিষয়টি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের জানালে দুদক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে পাপিয়াকে আটক করে দুদক।
জানা গেছে, সোমবার রাত ৮টার দিকে রমনা থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। দুদক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পাপিয়াকে রমনা থানায় হস্তান্তর করেছে।
এদিকে আটকের পর দুদক কার্যালয়ে পাপিয়া আক্তার অপরাধকন্ঠকে জানান, আমার সঙ্গে যারা ছিল এখন তাদের কেউ নেই। আমি আসলে ফেঁসে গেছি। আমাকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
দুদক কার কাছে এসেছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কারো কাছে আসিনি। আমার সঙ্গে যারা এসেছিলেন, তারাই জানেন। আমি তাদের সঙ্গেই এসেছি।’