দেশে ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল আমদানির আড়ালে একটি চক্র দেশে আনছে মাদক। একশ্রেণির ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে ৬ পাউন্ড কোকেনসহ এ ধরনের এক চক্রের ৬ জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ বলছে কতিপয় ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল আমদানির আড়ালে এ কাজ করছে। এ ধরনের চক্রকে গ্রেফতারে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কতিপয় ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক ওষুধের কেমিক্যালের আড়ালে কোকেন নিয়ে আসছে। এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। একপর্যায়ে আমরা নিশ্চিত হই চক্রটি কোকেন নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ খবর পাওয়ার পর পরই আমরা অনুসন্ধান বাড়িয়ে দিই। তিনি বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ নম্বরএলাকার ৫ নম্বর সড়কের পশ্চিম মাথায় খ-৫২/৩, জামান মার্কেটের সীমা ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় সেখান থেকে কামরুল আলম (৪০) ও তাহের ম-ল ওরফে জবাসহ (৩০) তাদের চার সহযোগী ওষুধের দোকানের মালিক মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া (৪৬), কাজী খলিলুল্লাহ্ মাহমুদ (৪০), মামুন হাওলাদার (৩৪) এবং মোশারফ হোসেন রানাকে (৪৪) আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬ পাউন্ড কোকেন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত কোকেনের বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মূলত এই চক্রের মূল হোতা কামরুল আলম, তাহের ম-ল ওরফে জবা , শামছু ও হানিফ আলী হান্নুু। পুলিশ এখন শামছু ও হান্নুকে ধরার জন্য চেষ্টা করছে। মূলত এদের নেতৃত্বেই খিলক্ষেত ও টানপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে ওই চক্রটি হোরোইন, ইয়াবা, কোকেন, মদ, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা চলে আসছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় অভিভাবকরা বার বার থানায় নালিশ করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ডিবি পুলিশ জানায়, কামরুল মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডিরেক্টর ও তাহের ম-ল ওরফে জবার স্পেনে বসবাসের অনুমতি (আরপি) রয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। মূলত এ চক্রটিই এসব কোকেন দেশে নিয়ে আসে। এরপর সেটি বিক্রি করার জন্য সীমা ফার্মেসির মোশারফকে দেন। ওষুধের দোকানে এগুলো রাখলে ঝুঁকি থাকবে না ভেবেই সেখানে এগুলো রাখা হয়েছিল। পরে মোশারফ কোকেনগুলো বিক্রির জন্য বাকি তিনজন- কাজি খলিলুল্লাহ, মামুন হাওলাদার ও মোশারফ হোসেন রানাকে দায়িত্ব দেয়। মামুন হাওলাদার পেশায় একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, খলিলুল্লাহ স্টক লটের ব্যবসা করেন এবং মোশারফ হোসেন রানা হার্বাল ব্যবসায়ী।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে-দীর্ঘদিন এ ধরনের খবর পাওয়া গেলেও এই চক্রটিকে আটক করার মধ্যে দিয়ে এর সত্যতা প্রমাণ হলো।
গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ আরও বলেন, কোকেন পাচারের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, এতে কোন বিদেশী চক্র আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এছাড়াও আর কোন ফার্মাসিউটিক্যালস কোকেন বা অন্য কোনো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।