কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিকটবর্তী সাগর থেকে মঙ্গলবার উদ্ধার ১২১ মালয়েশিয়াগামীদের পাচারে জড়িত ছিল প্রায় অর্ধশত দালাল। উদ্ধার হওয়া দালালের দেওয়া তথ্য মতে প্রশাসন এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
এ ঘটনায় কোস্টগার্ড বাদী হয়ে বুধবার সকালে টেকনাফ থানায় পৃথক ২টি মামলাও দায়ের করেছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা বাদী হয়েছে পৃথক আইনে মামলা ২টি দায়ের করেছেন। এর মধ্যে একটি মামলা হচ্ছে বৈদেশিক নাগরিকের অবৈধভাবে অনুপ্রেবশ এবং অপরটি মানবপাচার আইনে।
বৈদেশিক নাগরিকের অবৈধভাবে অনুপ্রেবশ আইন দায়ের করা মামলায় ট্রলারে থাকা মিয়ানমারের ৮৮ নাগরিককে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, মানবপাচার আইনে দায়ের করা মামলায় দালাল হিসেবে ২৮ জনের নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি ট্রলারে ছিল ১৬ জন। অপর ১২ জন পলাতক রয়েছে। এ ১৬ জনকে সংশ্লিষ্ট ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোস্টগার্ড, মামলার এজাহার এবং উদ্ধার হওয়া যাত্রী সূত্রে জানা যায়, অর্ধশত দালালের নিয়ন্ত্রণে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বিভিন্ন মোহনা থেকে ছোট্ট ছোট্ট ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিকটবর্তী সাগরে অপেক্ষারত বড় ট্রলারে এসব যাত্রীদের পৌঁছানো হয়। মঙ্গলবার ভোরে কোস্টগার্ড সদস্যরা ২১১ যাত্রীকে উদ্ধার করে এবং ২টি ট্রলারও জব্দ করে।
ওই সময় ট্রলারে থাকা ১১ জন মাঝি ছাড়াও ৫ জন দালাল ট্রলারে উপস্থিত ছিল। এরমধ্যে মিয়ানমারের নাগরিক ছিল ২ জন। অপর ৩ জন বাংলাদেশের নাগরিক। এ ৩ জন হলো- কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়া এলাকার মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আব্বাস, একই এলাকার কাশিমের ছেলে সব্বির আহমদ, চুয়াডাঙা জেলার দিল মোহাম্মদের ছেলে বদর উদ্দিন। এরইমধ্যে মানবপাচার মামলায় এ ১৬ জনকে আদালতেও পাঠানো হয়েছে।
কোস্টগার্ডের দায়ের করা মামলার এজাহারে পলাতক আসামি করা হয়েছে, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের জহির উদ্দিনের ছেলে রব্বানী, কবির আহমদের ছেলে শাকের, নুরুল ইসলামের ছেলে নুর হোসেন, খলিলের ছেলে হোসেন কালু, কবির আহমদের ছেলে মনু মিয়া, মাস্টার ছৈয়দ আহমদের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন, মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে গুরা মিয়া, ফরিদ আহমদ, আলী মিয়া, রশিদ, আক্কাস এবং কক্সবাজারের কালির ছড়া এলাকার কালুর ছেলে মোহাম্মদ হোসেনকে।
এদিকে মামলায় সংশ্লিষ্ট দালাল ও মিয়ানমারের নাগরিককে আদালতে পাঠানো হলেও অন্যদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। টেকনাফ থানার পুলিশ বুধবার ২৭ জনকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করলে অন্যান্য ৮০ জনকে মানবপাচার নিয়ে কাজ পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা ইপসার কাছে হস্তান্তর করেছে।
এদের ধারাবাহিকভাবে অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
পাচারকালে মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিকটবর্তী সাগর থেকে ২১১ যাত্রীকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এসময় ২টি ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া যাত্রীর মধ্যে ২০ জন নারী এবং ১৭ জন শিশু রয়েছে। এরা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক। এদের সঙ্গে রয়েছে ১১ জন বিদেশ ক্রু (মাঝি)। যার মধ্যে থাইল্যান্ডের ৬ জন এবং মিয়ানমারের ৫ জন রয়েছে। মিয়ানমারের নাগরিক (পুরুষ) রয়েছে ৫৮ জন।