রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক হোটেল এবং আবাসিক বাসভবনে দিনে-রাতে অবাধে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা। গতকাল গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক ঢাকার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালনার পর আটক ছয় পতিতাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় নারী দেহের পসরা সাজিয়ে অবাধে ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছে জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার পাঁচ মক্ষীরাণী।
রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, খিলগাও ও মগবাজার এলাকায় অসংখ্য আবাসিক হোটেল ও বাসায় দেহ ব্যবসার পাশাপাশি মাদক ব্যবসাও চালু রেখেছে উক্ত মহল।
জানা গেছে, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও বিদেশ থেকে আসা ফান্ড বন্ধ হওয়ার কারণে ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা মাদক ব্যবসায় ও ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে শুরু করে। জামায়াত নেতাদের ভোগ বিলাসের জন্য ছাত্রী শাখা গঠন করা হয়েছিল। তবে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের আড়ালে দেহ ভোগের বিষয়টি সেভাবে আলোচিত হয়নি।
[ছাত্রী সংস্থার নারীদের কিভাবে ইসলামের অপব্যবহার করে পতিতায় পরিণত করা হয় তার চাঞ্জল্যকর তথ্য থাকবে পরবর্তি পর্বে।]
ইসলামী শরীয়তের সাথে পতিতাবৃত্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গ্রেফতারকৃত মক্ষীরানী নিলুফার বলেন, মাওলানা মওদুদী হুজুরের কিতাবে আছে দাসী ভোগ করা জায়েজ। আমরা দুই দিনের দুনিয়ায় আখেরাতের কামিয়াবির জন্য নিজেদেরকে খাদেম হিসাবে কোরবান করেছি। আলেম ওলামাদের খেদমতে কোনো পাপ নাই। মন পবিত্র আছে কিনা সেইটাই বড় কথা।”
উল্লেখ্য ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের সাংগঠনিকভাবে দাসী মর্যাদা দেয়া হয়। ফলে মওদুদী মতবাদ অনুসারে ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের ভোগ করার অধিকার নেতৃবৃন্দের রয়েছে।
ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দল থেকে মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা পেত। গত দুই বছরে সাংগঠনিক স্থবিরতা ও আর্থিক সংকটের কারণে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অসৎ পথে আসায় রাজধানীর দেহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে ছাত্রী সংস্থা ও শিবিরের কয়েকজনের কাছে।
ঢাকার দেহব্যবসা পাঁচ জনের নেতৃত্বে চললেও গুল বদন, দিল আফরোজ ও খুরমা মূলত নারী জোগাড় ও সরকরাহ এবং মেহেক ও চম্পা ইয়াবা সংগ্রহ ও সরবরাহে মূল ভূমিকা পালন করে। আরও জানা যায়, একটি শ্রেণীর কাছে নারীর চেয়ে হিজড়া বেশি পছন্দনীয়। পাকিস্তানে হিজড়ার উপভোক্তা বেশি হলেও বাংলাদেশে জামাত ঘরানার অনেকে হিজড়া ভোগে অভ্যস্থ। হিজড়া ভোগ সহজতর করতে ২০১০ সালে ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে জামাতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কর্তৃক কয়েকজন হিজড়াকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দিলে শিশির মোহাম্মদ মনিরের নেতৃত্বে শিবিরের একটি গ্রুপ বিরোধিতা করে। নারী ও হিজড়া সম্ভোগ নিয়ে বিরোধিতার এক পর্যায়ে মনিরকে বহিস্কার করা হয় এবং শিবিরের ২৫ জনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
ঢাকা কেন্দ্রিক দেহ ব্যবসার নেটওয়ার্কে গুলজার, লাদেন ও সাদ্দাম ছদ্মনামে ছাত্র শিবিরের তিন নেতা পাঁচ মক্ষীরানীর প্রধান দালালের ভূমিকা পালন করে। নারী ও মাদক সংগ্রহ ও সরবরাহে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তাদেরকে ডিজিটাল দালাল বলা হয়।
গতকাল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন পতিতা আটকের পর দেখা যায় শার্ট প্যান্ট বা স্কার্টের উপরে তারা বোরকা পরেছে। আটককৃতদের মধ্যে তিন পতিতা বোরকার নীচে কিছুই পরেনি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলাম প্রচারের নামে ছাত্রীদের আকৃষ্ট করা হয়। এছাড়া পুরস্কারের নামে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম ঠিকানা জোগাড় করে জামাতি আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হয়।
ছাত্রী সংস্থায় জড়িত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে সদস্যদেরকে কোনো অপকর্ম সম্পর্কে বুঝতে দেয়া হয় না। সদস্যদের জন্য প্রকাশিত বই পুস্তকে জামাতই একমাত্র দল এবং জামাত নেতারা আল্লাহর প্রতিনিধি এমন ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো হয় যে জামাত-শিবিরের নেতারা ভোগ করলে কোনো গুনাহ হবে না। অনেকক্ষেত্রে প্রেমের নামেও তাদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়। পরবর্তিতে ব্ল্যাকমেইল করে পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত করা হয়। এছাড়া অনেকে অর্থের অভাবে কিংবা অর্থের প্রলোভনে পড়ে বিলাসিতার জন্য দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
রাজধানীতে প্রায় ১০৩টি হোটেল ও আবাসিক বাসভবনে ছাত্রী সংস্থার পাঁচ নেত্রী দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিছু অসাধু পুলিশ ও সাংবাদিকদের নিয়মিত টাকা দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিগণের সাথে এই চক্রের সুসম্পর্ক রয়েছে।
উম্মে হাবিবা নামে ছাত্রী সংস্থার এক যৌনকর্মী জানায়, খদ্দের যে টাকা নেয় তার ৫০ ভাগ তাদের দেয়। বাকি টাকা থেকে মধ্যস্থতাকারী দালাল ও আনুষাঙ্গিক খরচের পর পাঁচ নিয়ন্ত্রকের কাছে চলে যায়।
পতিতারা ছদ্মনামে ভিজি
টিং কার্ডও ব্যবহার করে যেখানে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা বা সাইমুম শিল্প গোষ্ঠীর নাম থাকে। আবার অনেক সময় কার্ডে হোটেল বা মধ্যস্থতাকারীর মোবাইল নম্বর থাকে। আর এভাবেই খদ্দেররা পৌঁছে যায় যৌনকর্মীদের কাছে।
ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা দিনে ইসলামের কথা বলে ছাত্রীদের জামাতের সাথে যুক্ত হওয়ার আহবান জানায়। বিকেল থেকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি।
সচেতন মহলের আশঙ্কা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে বড় ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে পড়তে পারে যুবসমাজ। সমাজের ক্ষতিকারক এ দেহ ব্যবসা প্রতিরোধে ছাত্রী সংস্থাকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে দেশবাসী।