সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

পারভেজ নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন!



কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা ও তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ সরকার (৪০)কে গত শুক্রবার অপহরণ করা হয়েছিল এবং প্রায় ৮ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয় এই মর্মে প্রায় সকল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মিডিয়ায় এ সংবাদ প্রচার ও সিসিটিভি ফুটেজ লিক হওয়া নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলেও পরবর্তি ঘটনাক্রম বিশ্লেষণে পারভেজ নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এই নাটকের উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা।

ঘটনার দিন পারিবারিক সূত্রে বলা হয় শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। বাসার নিরাপত্তারক্ষী ওমর আলীর মতে, পারভেজ সরকার বাসায় ফেরার সময় বাসার সামনেই এক ব্যক্তি তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে আসে। তাকে ধস্তাধস্তি করে গাড়ীতে তোলা হয়। কিন্তু পারভেজ হোসেন বলেন, আমার সাথে সালাম দিয়ে কথা বলার কৌশলে এবং পেছন থেকে একজন ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়। আমার চোখে কালো কাপড় বেঁধে এবং মুখেও একটা কাপড় দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। অজ্ঞান করা হলে এত দ্রুত জ্ঞান ফিরতো কিনা সেই প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় (সময় ১১:২০ ঘটিকায়) তাকে টেনে পাশে নিয়ে গাড়িতে তোলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞান করে গাড়িতে তোলা হয়েছে নাকি গাড়িতে তোলার পর অজ্ঞান করা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তিন জন প্রত্যক্ষদর্শি থেকে বিবরণ জানা যায়। কথিত অপহরণকারীদের দুজন বাইরে ও দুজন গাড়ির ভেতর ছিল। সিসিটিভিতে কয়েকজনকে দৌঁড়ে আসতেও দেখা যায়। বিনা বাধায় কিভাবে অপহরণ করা সম্ভব হয়েছে উত্তর মেলেনি সেটিরও।

পারভেজের মামা কামরুল হোসেন দাবি করেন, তিনি সব সময় চার থেকে পাঁচজন লোক সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতেন। আজ শুক্রবার মসজিদে একাই গিয়েছিলেন। আবার অপহরণের পর পারভেজের স্ত্রী তাহমিনা পারভেজ বলেছিলেন, কয়েকদিন থেকে গাড়ি ছাড়া ছেলেদের নিয়ে বাইরে না যেতে ও একা ঘোরাফেরা না করতে বলেছিলেন। তাই সেদিন কেন এর ব্যত্যয় ঘটেছিল তার সদুত্তর পাওয়া যায় নি।

আরও রহস্য সৃষ্টি হয়েছে গাড়ির নম্বর প্লেট নিয়ে। ‘ঢাকা মেট্রো ঘ ১৪-২৫৭৭’ নম্বর গাড়িটির নম্বরপ্লেট সিসিটিভিতে আসতে পারে এমন চিন্তা অপহরণকারীদের আসবে কিনা এ প্রশ্ন করছেন অনেকে। যেহেতু উক্ত নম্বরটি ভুয়া বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে তখন এত দ্রুত নম্বর জানার বিষয়টিও রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সবার হাতে ওয়াকিটকি ও পিস্তল ছিল, আবার বলা হয়েছে একজনের বড় চুল ছিল।

এছাড়া শুধুমাত্র দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে ছেড়ে দিবে কেন বা সেই স্ট্যাম্পই বা কি দরকারে আসবে সঠিক কার্যকারণ জানা যাচ্ছে না।

ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পারভেজ কেউ জড়িত নন বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তিতে রাজনৈতিক বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করে কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করেছেন। তবে মোটের উপর পরিকল্পিতভাবে হলেই ঘটনার প্রতিটি ক্রমধারার সমাধান মেলে।

পারভেজ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করার সুবাদে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সন্দেহভাজনদের একজন অভিযোগ করেন, পারভেজের পিতা বেলায়েত হোসেন সরকার তিতাস উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। পারভেজের রাজনীতির হাতেখড়ি ঘটে ঢাকা কলেজের ৯২-৯৩ সেশনের ভিপি-জিএস হারুন ও জাভেদের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবে। পারভেজের ভাই মাসুদ তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চিয়ার্স রেস্টুরেন্টসহ বেশ কয়েকটি জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

পারভেজ ২০০৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিতাস উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগে যোগদান করে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অপহরণ নাটকের মাধ্যমে আলোচনায় আসাই তার উদ্দেশ্য ছিল।

জানা গেছে, কুমিল্লা ২ আসনে অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, নারী উদ্যোক্তা মেরি, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী ও তিতাসের মেয়রসহ হেভিওয়েট প্রার্থীর কারণে পারভেজ সরকারের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে এমকে আনোয়ারের অসুস্থতার কারণে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার ছাড়া শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফের সাথে বহুবছরের রাজনৈতিক সখ্য ও তাঁর ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়ার পারভেজকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র আলোচনায় এসে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যই অপহরণের নাটক রচনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে কথিত অপহরণে ব‍্যবহৃত গাড়িটি সনাক্ত করা গেলে রহস্য উন্মোচন সহজ হবে।