সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা'কাণ্ড ও খালেদা জিয়ার সহিংস রাজনীতি


আদর্শিক রাজনৈতিক দলে কিছু কিছু মহামান্য থাকেন, যাদের জন্ম হয় ইতিহাস তৈরি করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যার অবদান কিংবদন্তী তূল্য তিনি জননেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন স্থানীয় জনগণ ও সারা দেশের শ্রমিকদের অত্যন্ত প্রিয়জন, সবার শ্রদ্ধেয় ‘স্যার’, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শ্রমিক নেতা, সততার মূর্ত প্রতীক। একাধারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পরবর্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজ (বিলস) এর চেয়ারম্যান, প্রধান শিক্ষক ও সাংসদ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করতে জনপ্রিয় নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করার যে রাজনীতি তখনকার জোট সরকার শুরু করেছিল তারই বলি মাষ্টার।

জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার থাকতেন বাপ-দাদার আমলের কুড়ে ঘরে, সুখে দুঃখে তিনি গাজীপুরবাসী ও শ্রমিকদের সাথে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শ্রমিকদের জন্য ৯টি বস্ত্রকল নামমাত্র মূল্যে সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালনা করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখেন, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হয়। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে তিনি জীবনবাজি রেখে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।
২০০৪ সালের ৭ই মে এক শ্রমিক সমাবেশে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হাসান সরকারের ভাই কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা মেরে ও ব্রাশ ফায়ার করে শ্রমজীবী মানুষের প্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয় নি। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে অভিহিত করে গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর দমন নিপীড়ন চালায়, এলাকা ছাড়া করে বহু পরিবারকে। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী সুমনকে র্যাব গ্রেফতার করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
আহসান উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সরকারের দায়িত্ব ছিল তারেক রহমান ও গিয়াস আল মামুনের আলোচিত প্রাসাদ খোয়াবের জমি জোগাড় থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ ও তার ক্যাডারদের দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা সুপারভাইজ করা। সেই খোয়াবেই আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত গাজীপুরকে আয়ত্বে আনতে আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো বিশাল ব্যক্তিত্বকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।
হত্যাকাণ্ড ঘটনানোর সময় প্রত্যক্ষদর্শী থাকায় এবং জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়লে গাজীপুরে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সারাদেশ শুধু নয়, বিশ্বেও আলোড়ন তোলে এই ঘটনা। তাই বাধ্য হয়ে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ২২ জনকে শাস্তি দেয়া হয় যাদের মধ্যে বিএনপি নেতা হাসান সরকারের ভাই যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম সরকার ও ভাতিজা রাকিব সরকার অন্যতম।
২০০৫ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডে হাসান সরকার রেহাই পেলেও দেশ ও বহির্বিশ্বের চাপে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে নুরুল ইসলাম সরকার ও রাকিব সরকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার পরও নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করে ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো হয়।
অতঃপর এক যুগ অপেক্ষার পর ২০১৬ সালে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত রায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। যার পান থেকে চুন খসলেই এখন সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা হয়তো বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ভুলে গেছেন। এখন যে কোনো অপরাধীই ছাড় পাচ্ছে না এটা যেন দেখেও না দেখার ভান করেন!