সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বহুরূপী খালেদা জিয়া


বাংলাদেশের রাজনীতির সামরিকতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। যদিও এ জাতীয় সরকার ব্যবস্থা সংবিধান বিরোধী এবং বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই, তথাপি ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিন বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু রাখার বিধান চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থান ছিল সার্কাসের মতো যার মাধ্যমে তার ক্ষমতালিপ্সু মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো দেশ শাসনের দায়িত্ব পেলেন। কিন্তু সবকিছু আবার বেহুদা তালগোল পাকিয়ে ফেলল মাগুরা আর ঢাকা-১০-এর উপনির্বাচন। মাগুরার নির্বাচনটি এতই তামাশাপূর্ণ ছিল যে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফকে রাতের অন্ধকারে মাগুরা সার্কিট হাউস ত্যাগ করতে হয়েছিল।

এই দুটি নির্বাচনী তামাশা দেখে সব বিরোধী দল একযোগে দাবি তুলল, এর পরের নির্বাচনগুলো অবশ্যই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। ১৯৯৬ সালে দাবিটি পুনর্বার উঠলে খালেদা জিয়া জানান, তিনি তা কিছুতেই মানবেন না। বললেন, শিশু আর পাগল ছাড়া দেশে কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তি নেই। 

ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা একটি নির্বাচন করলেন এবং সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি কর্নেল (অব.) আবদুর রশিদকেও পবিত্র জাতীয় সংসদে সাংসদ হিসেবে প্রবেশের সুযোগ দিলেন। 

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। কিন্তু আবারও তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার সংঘাত, আবার রক্তক্ষয়, আবার অনিশ্চয়তা। এরপর দেশে এল জরুরি অবস্থা, ক্ষমতা গ্রহণ করলেন খালেদা জিয়ার একদা আস্থাভাজন ফখরুদ্দীন আহমদ আর তাঁর পেছনে আরেক আস্থাভাজন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। সংবিধান অনুযায়ী থাকার কথা তিন মাস আর জরুরি অবস্থার মেয়াদ সংবিধান অনুযায়ী শেষ করতে হবে ১২০ দিনের মধ্যে। ফখরুদ্দীন সরকার বলল, কোনো কিছুই এখন প্রাসঙ্গিক নয়। মইনুদ্দিন বললেন, গণতন্ত্রের ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে। তাকে আগে লাইনে তুলতে হবে। 

কিন্তু ২০০৭ সালে এক ছাত্র বিস্ফোরণে বোঝা গেল, বাংলাদেশের ক্ষমতার চাবি সব সময় জনগণের হাতে। এল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, হলো সাধারণ নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষমতার এত অপব্যবহার হয়েছিল যে তা দুঃশাসনের এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছিল এবং নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট আর জাতীয় পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। 

আবার খালেদা জিয়ার রূপ পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি বললেন, এসব কোনোটিই মানি না। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। 

২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দেন। সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষেও রায় দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নবম জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

পাকিস্তান ও গ্রিস ছাড়া বিশ্বের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সব দেশেই নির্বাচিত সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং সুষুম, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটাই কাম্য। যে ব্যবস্থা বিতর্কিত হওয়ার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংসদ কর্তৃক বাতিল হয়েছে, তা পুনঃপ্রবর্তনের সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই।