সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া!

 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৮১ সাল ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে ভয়ানক সময়। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জিয়া মেতে ওঠেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়ার অবৈধ শাসনামলে বিভিন্ন দল, মত ও বাহিনীর প্রায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জিয়ার অবৈধ শাসনামলের পর দেশে সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।

তথ্যসূত্র বলছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জয়ী হয়েই দেশব্যাপী বিরোধী দল ও মতের মানুষদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত সরকার। ক্রসফায়ারের নামে সারাদেশে শুরু করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। ২০০২ সালে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে দেশে প্রথমবারের মত শুরু হয় মানুষ হত্যার রাজনীতি। তারপর ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠন করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। 

‘ক্রসফায়ার’ এর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে ক্লিনহার্ট অভিযানের নামে বিরোধী মত দমন করার নতুন এক অপকৌশল বেছে নিয়েছিল খালেদা সরকার। এই অপারেশন ক্লিনহার্ট অভিযানে হত্যা করা হয় অসংখ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে। ক্লিনহার্ট অভিযান সমাপ্তির পর নতুন মোড়কে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ওই সময়ে অভিযানে যারা নিহত হতো, তাদের বলা হতো ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছে। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাসহ রাজনৈতিক মহল বিচার বহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোয় ক্রসফায়ার শব্দটির পরিবর্তে কিছুদিন ‘এনকাউন্টার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্যমতে, ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ১৫৫ জন ব্যক্তিকে বিনাবিচারে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত সরকার। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই প্রথমেই সংখ্যালঘু নিধন, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়িঘর দখল ও তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করে সরকার দলীয় ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন দেয়া, দখল করে নেয়া, বাড়ি ছাড়া করাসহ নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে তৎকালীন সরকার।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জাতীয় সংসদে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে দায়মুক্তি দেয়ার জন্য ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ পাস করিয়ে নেয় এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রথম বৈধতা দেয়। ‘যৌথ অভিযান দায় মুক্তি আইন ২০০৩’ করে ন্যায় বিচার চাওয়ার রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। এছাড়া ক্লিনহার্ট অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনে নিহতদের বলা হতো ‘হার্টফেল’ করে মারা গেছে। অপারেশন ক্লিনহার্টে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হন এবং এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৮৩ জন, ২০০৩ সালে ৮১ জন, ২০০৪ সালে ২১০ জন, ২০০৫ সালে ৩৭৭ জন ও ২০০৬ সালে ৩৬২ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। এর দায় খালেদা জিয়া কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।