সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বিভিন্ন গ্রামে গোপন তৎপরতা বাড়াচ্ছে জামায়াত-শিবির

 


মনে হতে পারে যে রাজনীতিতে জামায়াত এখন আর নেই। কিন্তু বাস্তবে এমনটি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা জামায়াত রাজনীতির কৌশল নির্ধারণে মোটামুটি পারদর্শী একটি দল। তারা মানুষের কাছে ভদ্র, শিক্ষিত চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়। কিন্তু ভতেরে শয়তানের পলিসিতে অন্যদলের ক্ষতি করে। তাদের অন্যতম কৌশল শাসক দলের লোভী দুর্নীতিবাজ কিছু নেতাকে দেখলে খুব খাতির সম্মান করে ভাব জমিয়ে ফেলে। এরপর বিভিন্ন উপায়ে তাদের সাথে সুর মিলিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান মুখে নিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলোতে কিছু দিন যাওয়া আসা করে। বেশ কিছু দিন যাওয়া-আসার পর স্থানীয় নেতা/কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। তাদের কফিলের ভূমিকায় থাকে কিছু লোভী পাতি নেতা। নয়ছয় অংকের ছকে দলের পক্ষে কাজ করার কথা বলে দলের একনিষ্ঠ কর্মি সমর্থক বলে স্বীকৃতি পায়।

কেউ কেউ আবার পাতি নেতার দায়িত্বও বাগিয়ে নিচ্ছে। এরা প্রভাবশালী নেতাদেরকে খুব সমীহ করে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। ভেতরে ভতরে গোপন কথাগুলো মূল জামায়াতী দলের মুরব্বীদের সাথে চ্যাটিং বা নির্ধারিত স্থানে দেখা করে পাচার করে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় খোন্দকার মোস্তাকের উত্তরসূরী বেজন্মা কিছু সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বশে রেখে দলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এসব জামায়াতপন্থীরা স্কুলে থাকলে স্থানীয় একজন নেতাকে স্কুলের/মাদরাসার সভাপতি বানিয়ে চাকরি নির্বিঘ্ন করে এবং ওই সভাপতির মাধ্যমে কারাবন্দীকালীন স্কুলের বেতন ভাতার বিলে স্বাক্ষর করিয়ে বেতন ভাতার পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। আবার অনেক প্রাথমিকে এলাকার পাতি নেতাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের তৈরি করা স্কুল কমিটিতে ঢুকে গেছে। এসব কৃত্রিম আওয়ামী লীগ দল প্রেমী জামায়াতরা নিজেদের সূরত বদলিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন স্কুলের প্রধান/শিক্ষক অমুক অনেক ভালো লোক আমাদের দলের একনিষ্ট বঙ্গবন্ধু প্রেমিক।


এভাবে তাদের জামায়াত-শিবির পরিচিতিটা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আসলে তারা কি কখনো আওয়ামী লীগ দল করবে? এখন তাদের সময় আর নেই বলে তারা সূরত বদলিয়ে দলের সাথে মিশে রয়েছে। ভেতরে ভেতরে তাদের দলীয় কাজ ঠিকভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় সংগঠিত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এরা বিভিন্নভাবে পরামর্শদাতার ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সুযোগ পেলে ল্যাংগ মারতেও দ্বিধা করে না। তবে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সাবধানে কথা বলে যেন দলের একনিষ্ট মুরিদ এমন ভাবে। আবার একই পদ্ধতি শিবিরের অনেক তরুণ যুক্ত হয়ে যায় তাদের পরিবারের জামায়াতী পিতা-মাতার পরামর্শে। মোটামুটি বলা চলে এখন দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে নেই। সমর্থকরা নিজেদের পরিচয় খুব একটা প্রকাশ করে না।

এ ছাড়া ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর অনেকেই প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, নিবন্ধিত অনেক দলেই জামায়াত তার কর্মীদের ঢুকিয়েছে। রাজনীতির কৌশল পরিবর্তন করে পর্দার অন্তরালে চলে গেছে। তবে এই যাওয়াটি ভিন্ন ভিন্ন স্রোতে, ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে মিশে যাওয়া। এ কারণে জামায়াতের আলাদা কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই, বক্তৃতা-বিবৃতিও নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জামায়াতের নেতাকর্মীরা দেশে নেই। তারা তাদের মতো করে মাঝেমধ্যে অন্যদের সঙ্গে কিছু কিছু সমাবেশ করে। তবে তাদের নেতাদের সাথে তাদের সংযোগ নীরবে চলছে। তাদের সমর্থকরাও মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছে। বেশির ভাগ ধর্মীয় মাহফিল ও এলাকার পরিচিত কেউ মারা গেলে জানাযায় শরীক হয়ে দলীয় কর্মীদের মাঝে সংযোগ হয়ে থাকে। প্রকাশে একের অধিক আলাপ করতে দেখা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডান পন্থার বিশ্বাসকে অকার্যকর কিংবা দুর্বল করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ আওয়ামী লীগ বা বাম পন্থার কোনো সংগঠনই সেভাবে নিতে পারেনি। ফলে ডান পন্থার বিকাশে চারণক্ষেত্র অবাধ থেকে গেল।


এটিকেই তারা ব্যবহার করছে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, বিষবৃক্ষের গোড়ায় যতই মধু ঢালা হোক না কেন, সে বিষাক্ত ফলই জন্ম দেবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ কথাগুলো আজ খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এ জন্য যে, তারা কখনো তাদের রূপ এবং বৈশিষ্ট্য বদলাতে পারে না। বঙ্গবন্ধু একটি লাল-সবুজের পতাকা, সংবিধান ও দেশ জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই লড়াইয়ের ফসল বাংলাদেশ। ধর্মান্ধ অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছি এবং এ সুযোগটিই নিয়ে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি।