সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

খালেদা জিয়ার জন্মদিনের ঠিক নেই কেন?



বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতার পালাবদল ও পট পরিবর্তন উভয়ই ঘটেছে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তবে নিয়তি আড়ালে মুচকি হেসেছে এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাকেও পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু না, ক্ষমতা দখলই শেষ কথা নয়, শত্রুরা জানতো, ইতিহাস খুব ভয়ঙ্কর। একে নিজ গতিতে চলতে দেওয়া যায় না। তাই ইতিহাস মুছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার অংশ জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া বিএনপির কর্ণধার হিসেবে রাতারাতি ক্ষমতায় আসীন হওয়া তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুরু করেন নতুন নতুন নাটক। আর এই নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ভুয়া জন্মদিন পালন’।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন তবে তখনও তাতে অতিমাত্রায় আড়ম্বর পরিলক্ষিত হয়নি। জন্মদিন কেক কেটে উদযাপন শুরু হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। মিন্টু রোডে নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের সাথে বেশ ঘটা করে ঐ বছরের ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন ভিন্ন মাত্রা পায়। এ ঘটনায় কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। প্রথমত,  ১৯৯১ সালের আগে তিনি কি নিজের জন্মদিন কখনও পালন করেননি? বিএনপি বিরোধী দলে যাওয়ার পরও বেগম খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্টে কেক কেটে জন্মদিন পালন হতে থাকে। জানা যায় একজন যুবদল নেতা ও বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে তিনি এ জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কে এই যুবদল নেতা ও বুদ্ধিজীবী। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ হতে থাকে। বিএনপি, ছাত্রদল, মহিলা দল, যুবদল জন্মদিনের আনন্দ করতে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে শোকের দিনে আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে যেতে থাকে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যার দিনে এমন ভুয়া জন্মদিন কি কোন মানবিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে?

আগস্ট ট্রাজেডি হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। এর পূর্বে প্রতি বছর ১৫ আগস্টে এবং তারপর এই ৪৬ বছরের প্রতিটি ১৫ আগস্টে এমনকি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেও অসংখ্য মানুষের জন্ম হয়েছে। তার মানে বাংলাদেশে লাখো মানুষের জন্মদিন ১৫ আগস্ট। সুতরাং অন্য ৩৬৪ দিনে যাদের জন্ম, তারা যদি জন্মদিন পালন করতে পারেন, ১৫ আগস্টে জন্মগ্রহণকারীরা কেন জন্মদিন পালন করতে পারবেন না? এই প্রশ্ন খুবই যৌক্তিক এবং সঙ্গত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেদিন আপনার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন, সেদিন যদি আপনার জন্মদিন হয়ও, আপনি কি সেদিন জন্মদিনের কেক কাটবেন?

জন্মদিন পালনের বিষয়টি অনেকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী। জাতির পিতার মৃত্যুদিনে তিনি কেক কাটেন কীভাবে? তার এমন কাজের একটাই উদ্দেশ্য, সেটি হলো বাংলার মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিন নিয়ে উপহাস করা!

এই দিনে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের জন্ম হয়েছে। কিন্তু চেনাজানা অনেককেই দেখেছি যারা শোক দিবসের সম্মান জানিয়ে নিজের জন্মদিন পালনের দৃষ্টিকটু আয়োজন থেকে বিরত থাকেন। সেখানে জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতার রক্তে রঞ্জিত জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি নেত্রীর ভুয়া জন্মদিনের নামে ১৫ আগস্টে আনন্দঘন উদযাপন কি নিছকই জন্মদিন পালন? জাতি এবং তরুণ প্রজন্মকে তারা যে বার্তা এর মাধ্যমে দিতে চান তা কি যথেষ্ট উদ্বেগের নয়? নিশ্চয় উদ্বেগের। কেননা, বঙ্গবন্ধুর  সপরিবারে হত্যার ঘটনা এতটাই নির্মম যে বিবেকবান মানুষ মাত্রই তাতে শিউরে উঠবেন ও শোকাভিভূত হবেন। 

বেগম জিয়া শুধু বিএনপি নেত্রী হিসেবেই নন, বেগম খালেদা জিয়ার অন্য একটি পরিচয়ও আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাসম। বঙ্গবন্ধু বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, তেমনি ছিলেন তার সহধর্মীনী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় খালেদা জিয়া যখন ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন, তখন জিয়াউর রহমান কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠিয়েছিলেন তাকে সেখান থেকে বের করে আনার জন্য। জিয়াউর রহমান চিঠি পাঠানো স্বত্বেও বেগম জিয়া ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। খালেদা জিয়া যুদ্ধের সময় নিরাপদে ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি জেনারেলদের সান্নিধ্যে ছিলেন। উনি আরাম আয়েশ ত্যাগ করে আসতে রাজি হননি। তিনি স্বেচ্ছায় সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান বেগম জিয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে  সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু দম্পতিই। জিয়াউর রহমান খালেদাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পিতৃস্নেহে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন খালেদাকে। পরে জিয়াউর রহমানের জন্য সেনাবাহিনীতে আলাদা পজিশন ক্রিয়েট করা হয় যার বদৌলতে তিনি প্রমোশন পান এবং শেখ মুজিব নিজের মেয়ে হিসেবে খালেদাকে জিয়াউর রহমানের হাতে তুলে দেন। এর বদৌলতে টিকে যায় বেগম খালেদা জিয়ার সংসার। তখন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্য জীবিত। ছোট্ট রাসেল এবং অন্যান্যদের খুব কাছ থেকেই বেগম জিয়া দেখেছেন। রাজনৈতিক মিথ্যাচার এবং ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি বাদে ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতাবোধের জায়গা থেকেও পিতৃসমতুল্য যিনি নৃশংসভাবে সপরিবারের তার নিহত হবার দিনে, জন্মদিনের কেট কাটতেও একবারও তার হৃদয় কেঁদে ওঠেনি! এই যে প্রতারণা এ শুধু আত্মপ্রতারণাই নয়, চরম অকৃতজ্ঞতার উদাহরণও বটে। যা একইসাথে প্রতারিত করছে জাতিকে।