সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বোমা ও অগ্নিসন্ত্রাসের নেত্রী খালেদা জিয়া

 


২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জনগণের উপর চালানো নির্যাতন, পাঁচ বছরের দু:শাসন, অপশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, নারী উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা, নারী নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ অসংখ্য অপকর্মের প্রত্যক্ষ ফল ছিল ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিকল্প পথে ক্ষমতায় যেতে জনবিচ্ছিন্ন এবং হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করে। ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অবরোধ’  ঘোষণার কারণে পরবর্তী তিনটি মাস সমগ্র বাংলাদেশ একটি তপ্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়ে উঠেছিল। সাধারণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মী-ক্যাডাররা।

বিএনপি-জামাত নির্বাচন ঠেকাবার চেষ্টায় ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দেয়। তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, চিকিৎসক, ব্যাংক-কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, পরিবহন শ্রমিক, দিন মজুর, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা কেউ।

বিএনপি জামাতের ছোঁড়া পেট্রোল বোমা ও অগ্নি সংযোগে দগ্ধ, অঙ্গার ও পুড়ে ছাই হয়ে মারা গেছে ১৫৩ জন সাধারণ মানুষ। নৃশংস ও নারকীয়ভাবে তারা আহত করেছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে। এদের অনেকেরই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, কারো হাত, কারো বা পা কেটে ফেলতে হয়েছে বেঁচে থাকবার প্রত্যাশায়। অনেকেরই মুখ-মণ্ডল হয়ে গেছে বিকৃত ও বিবর্ণ। আগের নামের মানুষটির সাথে তার বর্তমান চেহারা ও অবয়বের কোনো মিল নেই! কী এক ভয়ংকার তাণ্ডব শুরু হয়েছিল গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে! ২০ দলীয় জোটের কর্মী-ক্যাডারদের আক্রমণ ও অগ্নি-সংযোগের শিকারে পরিণত হয়েছে ২ হাজার ৫০০ যানবাহন। ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য অগ্নিদগ্ধ কিংবা পেট্রোল বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন। বেপরোয়াভাবে পিটিয়েও আহত করা হয়েছে সরকারি এই বাহিনীর সদস্যদের। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা সরকারি ও অন্যান্য স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে প্রায় পঞ্চাশটির মতো [সূত্র : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস : বর্বরতার ১০০ দিন]। সব মিলিয়ে সেসময় অগ্নিদস্যুতার নানা অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সাধারণের নাগরিক জীবনকে করে তুলেছিল দুর্বিষহ। 

এদেশের মানুষের কত শ্রমঘণ্টা নষ্ট করেছে তারা তার হিসেব করা কঠিন। হিসেব করা কঠিন এদেশের কতো শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় কী পরিমাণ ক্ষতিসাধন তারা করেছে। তারচেয়েও বেশি কঠিন সেই তিন মাসে দেশবাসীর মনস্তাত্ত্বিক জগতকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে সেই হিসেব করা।

১৮ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে অবরোধ চলাকালে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে যে ট্রাকটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার হেলপার ছিল সোহাগ। আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার একটি পার্কিং করা বাসে ঘুমন্ত হেলপার সতেরো বছরের কিশোর তোফাজ্জলের কথা মনে করে। রাতের বেলায় তোফাজ্জল বাসে ঘুমিয়েছিল- বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা সে বাসে চোরাগোপ্তা আগুন ধরিয়ে দেয়। আর সেখানেই সে পুড়ে অঙ্গার ও ছাই হয়ে মৃত্যুবরণ করে। নারায়ণগঞ্জের আড়াই বছরের শিশু সফির বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে কী অমানবিক যন্ত্রণায় ছটফট করেছে তার খোঁজ কোনো বিএনপি নেতা-নেত্রী  নিতে যাননি। রাজনীতি কী জিনিস তা বুঝেনা সফির। কিন্তু এক অপরাজনৈতিক জিঘাংসার শিকারে পরিণত হতে হয়েছে তাকে।

সফিরের মতো আরো অনেক শিশু রাজনীতি বুঝতো না। কিন্তু রাজনীতির ভয়াল ও ভয়ংকর ছোবল তাদের জীবনকে করে দিয়েছে অসহনীয় উপলব্ধির সমান্তরাল। এদের মধ্যে আড়াই বছরের জুঁই, ছয় বছরের রূপা আক্তার, বারো বছর বয়সী নাজিম, পনেরো বছর বয়সী মিনহাজুল ইসলাম অনিক ও শাহরিয়ার হৃদয়সহ আরো কতো নাম ও কতো চেহারার মানুষ। এরা কেউ শিশু, কেউ বৃদ্ধ কেউ বা কর্মক্ষম শক্তিশালী নারী ও পুরুষ, কেউবা মেধাবী ও তুখোড় শিক্ষার্থী। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতায় এরা প্রত্যেকেই আজ বরণ করেছে দুর্ভাগ্যের নির্মম নিয়তি। বরণ করে নিয়েছে পঙ্গুত্ব! বিগত বছরের তিন মাসের দীর্ঘ সময়ে পেট্রোল বোমা আর আগুনে পুড়ে পুড়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা, বেড়েছে বিকৃত ও বিবর্ণ চেহারার মানুষের সংখ্যা। এরকম আর কতো মৃত্যু কতো যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের কথা বলবো! কত বিবর্ণ ও বিকৃত হয়ে যাওয়া মানুষের কথা স্মরণ করে আমরা কবি কথিত ‘হৃদয় খুঁড়ে বেদনা’ জাগাবো? বিস্মিত হই এই ভেবে যে, এত মৃত্যু, যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের এত হাহাকার ও আর্তনাদেও বেগম জিয়া তার ‘অবরোধ’ প্রত্যাহার করেননি। আগুনে, ত্রাসে, সন্ত্রাসে দুঃসহ যন্ত্রণার ৫ জানুয়ারি কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হয়েছে, আর দীর্ঘতর হয়েছে বিএনপির অগ্নিদস্যুতার কালো ইতিহাসের পথরেখা।