সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

খালেদা জিয়া কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিচার বন্ধের ষড়যন্ত্র

 


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশে খুনিদের শাসন কায়েম করা হয়েছিল। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে অযত্ন অবহেলায় পড়ে ছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের রক্তাক্ত লাশ। আয়োজন করা হয় নি জানাজার। খুনিদের প্রতিরোধ দূরে থাক তাদের কর্তৃত্বকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অপরাধের সহযোগী হয়ে জেনারেল শফিউল্লাহকে সরিয়ে সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে পুতুল মোশতাককে সরিয়ে সামনে আসেন জিয়া এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি হন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরই খুনিদের বিদেশে পলায়নের সুযোগ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু জাতি অবাক হয়ে দেখলো - বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রকে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দান করা হয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে সংবিধানকে কলঙ্কিত করে ন্যায়বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার ছিন্ন করা হয়। মোশতাকের জারি করা সেই ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া। 

খালেদা জিয়ার শাসনামলেও খুনিচক্রের প্রধান রশিদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়। বিরোধী দলের আসনে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সে সময় ফারুক-রশিদ ঢাকায় নানা ধরনের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন এবং একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। অন্যদের মধ্যে ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ খালেদা জিয়ার শাসনামলে (১৯৯১-৯৬) কেনিয়া, হংকং ও ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত বা কনসাল জেনারেল পদে নিযুক্ত ছিলেন।

ফারুক-রশিদ লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় ফ্রিডম পার্টির কর্মীদের লিবিয়া সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লিবিয়ায় কয়েক শ যুবককে ৩ থেকে ৬, এমনকি ৯ মাস পর্যন্ত সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লিবিয়ায় পিস্তল থেকে শুরু করে মেশিনগানসহ আধুনিক অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্যাডাররাই ছিল ফ্রিডম পার্টির প্রধান ভিত্তি। খুনি চক্রের কর্মকাণ্ড থেকে দেখা যায়, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশে-বিদেশে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসদ সদস্য হওয়া এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব কার্যক্রমের প্রকাশ্য সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র।

রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তা যদি প্রতিহিংসায় রূপ নেয় তবে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। জিয়া ও খালেদা দুজনই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসার চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছেন। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন শুরু করেন খালেদা জিয়া।

পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রায় দুই দশক ধরে নানা ঘটনায় আরও দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশে-বিদেশে যেখানেই থেকেছেন, সেখানে বসেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে, কখনোবা সামরিক বাহিনী বা সরকারের অভ্যন্তরে শক্তিগুলোর সহায়তা নিয়ে এ গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে অব্যাহতভাবে। গণমানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৮১ সালে নিজের জীবন বিপন্ন করে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর তার হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তারপরই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চক্রান্ত ও অপতৎপরতার পথ সীমিত হয়ে আসে। 

১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। এরপর গ্রেফতার হয় কয়েকজন খুনি। বাকিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ১২ মার্চ আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তারিখে মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আপিলের পর আদালত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

কিন্তু খুনিচক্রকে রক্ষায় আবার তৎপরতা শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর এই বিচার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি আওয়ামী সরকারের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিচ্যুত কয়েকজন খুনিকে আবারো প্রমোশন দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন খালেদা জিয়া। জেল থেকে মুক্তি দিয়ে খুনি খায়রুজ্জামানকে সরাসরি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগের সময়ে জিম্বাবুয়েতে থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত ও পরবর্তীতে সেখানেই মারা যাওয়া আরেক খুনি আজিজ পাশাকে মরণোত্তর প্রমোশন দেওয়ার অবিশ্বাস্য নজির গড়া হয়েছে খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্দেশে।

তবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ফলে বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশে ২০০১ সাল থেকে থেমে থাকা বিচারপ্রক্রিয়া আবারো শুরু হয়। উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ১২ আসামির ফাঁসির রায় বহাল থাকে। ২০১০ সালে খুনিদের মধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর ২০২০ সালে আরো এক জন দণ্ডিত খুনিকে গ্রেফতার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছে। বাকি পাঁচ জন ফাঁসির আসামি আত্মগাপন করে বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। 

অনেকেই খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কি কখনো বিবেচনা করে দেখেছেন শেখ হাসিনার হৃদয়ে কতটা রক্ত ক্ষরণ সৃষ্টি করা হয়েছিল! রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হৃদয়ের যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে। তবু শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পরিবারের আবেদনের পেক্ষিতে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

সূত্র: