সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

খালেদার পৃষ্ঠপোষকতায় কিবরিয়া হত্যা!

 খালেদার পৃষ্ঠপোষকতায় কিবরিয়া হত্যা!

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া শুধু সেরা অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, কর্মজীবনে অর্থনীতিবিদ, ঝানু কূটনীতিবিদ ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অবসর গ্রহণের পর রাজনীতি করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা তাকে টেকনোক্রেট কোটায় অর্থমন্ত্রী করেছিলেন। ২০০১ সালে জয়ী হয়ে সংসদে আসেন তিনি। তার অসাধারণ ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের কারণে শিকার হন অপরাজনীতির। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে নিজের নির্বাচনী এলাকায় এক জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে বিএনপি জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর গ্রেনেড নিহত হন তিনি।

কিবরিয়াকে বাঁচাতে না পারার পেছনে তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের নিদারুণ অবহেলা এবং নিষ্ক্রিয়তা দায়ী ছিল। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে অন্তত কিবরিয়াকে বাঁচানোর সুযোগ পাওয়া যেত। সেদিন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীসহ ৫ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। ক্ষতবিক্ষত কিবরিয়াসহ আহতদের দ্রুত নিয়ে আসা হয় হবিগঞ্জের সদর আধুনিক হাসপাতালে। শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছিল না। সরকারের কাছে দ্রুত হেলিকপ্টার যোগে তাদের ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন ভয়াবহ হামলার পরেও সরকারের উচ্চপর্যায়ের অবহেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় হেলিকপ্টার, এমন কি চিকিৎসাও পাওয়া যায়নি। ফলে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় কিবরিয়ার। স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা জাতি।


কিবরিয়াসহ এতোগুলো মানুষের নির্মম হত্যার ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মামলাটির স্বাভাবিক তদন্ত না হয়ে দলীয় বিবেচনায় পরিচালিত হতে থাকে। বিশেষ করে তখনকার সময়ে ঘটা অন্য সকল জঙ্গি হামলার মতো এই হামলার পেছনে থাকা মাস্টারমাইন্ডদেরও বাঁচিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হতে থাকে। যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছিল, তাদের সবাই ছিলেন স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। তাদেরকেই আসামী দেখালেও মূল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়।

বাধ্য হয়ে বাদী আবদুল মজিদ পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র নারাজি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন খারিজ করলে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করেন। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। সরকারের আপিল হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়।  বন্ধ হয়ে যায় কিবরিয়া হত্যার বিচার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলা রিওপেন হলে অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্ব পায় সিআইডি। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামী করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এই অভিযোগপত্রে যোগ হয় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্কর-ই তৈয়বা সদস্য আব্দুল মজিদ কাশ্মীরি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু’র ভাই মাওলানা তাজ উদ্দিন, মহিউদ্দিন অভি, শাহেদুল আলম দিলু, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, ফজলুল আলম মিজান, মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, মুফতি সফিকুর রহমান, বদরুল এনায়েত মো. বদরুল, বদরুল আলম মিজানের নাম।


কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, চারদলীয় জোটের শীর্ষ মন্ত্রী ও নেতাদের যোগসাজশ এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমদাদুল হকের সম্পৃক্ততায় হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে দাবি করেন।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হলে কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

জনাব শাহ এএমএস কিবরিয়া একজন অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী কিংবা ক্লিন ইমেজের পলিটিশিয়ান—যে ভূমিকাতেই থাকুন না কেন, আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন সবসময় জনগণের কল্যাণে, জীবনমান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে। প্রতিদানে মানুষ তাকে ভালবেসেছিল। কিন্তু সামান্য মানবিকতা বা সহানুভূতি প্রদর্শন করেন নি খালেদা জিয়া। দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারে কিবরিয়ার মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয় সৎ ভালো মানুষদের শেষ করে দেয়ার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীণ চার দলীয় জোট সরকার শাহ এএমএস কিবরিয়া সহ বরেণ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের হত্যা ও নিপীড়ন চালিয়ে বর্বরতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তা কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জনাব কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া ক্ষমতার জন্য তার পিতার হত্যাকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিলেটবাসীর ঘৃণার পাত্রে