সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

শিশুদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করতে শিবিরের অপতৎপরতা! আটক ৫৩!

 


জামায়াতে ইসলামী বা শিবিরে যোগদান করলে নিশ্চিত জান্নাত', 'শিবিরের দাওয়াত গ্রহণ না করলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে', 'জামাত নেতারা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন', 'জামাত নেতাদের দৈহিক মনোরঞ্জন করলে ৭০ হাজার কাফের মারার সওয়াব পাওয়া যাবে', 'নামাজ-রোজা করে কোনো লাভ নেই হুকুমত দখলের নাম ইসলাম' - ইত্যাদি মনগড়া কথা বলে, কখনো লোভ দেখিয়ে, কখনো ভীতি সৃষ্টি করে গড়ে তোলা হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো। গত রোববার রাজশাহীর তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের দুটি পার্কে শিশুদের নিয়ে জঙ্গিবাদী তালিম দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়েছে ৫৩ শিবির ক্যাডার ও দেড়শ শিশু। 


উল্লেখ্য, আবু আলা মওদুদী ও জামায়াতে ইসলামীকে বিশ্বের সকল ইসলামী দল বা মতাদর্শের শীর্ষ আলেমগণ কাফের অথবা পথভ্রষ্ট আখ্যা দিয়ে তাদের ইমামতিতে নামাজ আদায় না করার এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। শাহ আহমেদ শফী, মাওলানা সাঈফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী সহ বাংলাদেশের প্রায় ছয়শ আলেমেরও এই মর্মে ফতোয়া রয়েছে। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো পরিবারের সন্তান কখনো জামায়াত বা শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হয় না। এ কারণেই শিশুদের টার্গেট করে পরিচালিত হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম।



শিশু-কিশোরদের জঙ্গিবাদে যুক্ত করতে বনভোজনের নামে নির্জন পার্কে তালিম দেওয়া হবে - এমন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় রাজশাহীর তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের নির্জন পার্কে অভিযান পরিচালনা করে দেড় শ শিশু-কিশোরকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে ৫৩ তরুণকে। এ সময় তাদের ভাড়া করা দুটি বাস থেকে মওদুদীর ছবি, সাঈদীর ওয়াজ, লিফলেট, কলম, জঙ্গিবাদী বই, হ্যান্ডনোট ও ২৬০টি টি–শার্ট জব্দ করে। কলমে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’–এর নাম লেখা আছে। এছাড়া "সহজে বোমা তৈরির কৌশল" ও "শহীদী তামান্না" নামের বই পাওয়া গেছে।


জানা গেছে, রাজশাহীর ‘ইউনিটেক কোচিং সেন্টার’ থেকে বনভোজনের নামে শিশু-কিশোরদের তানোর ও নাচোলের দুটি নির্জন পার্কে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সোমবার ভোররাতের দিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪৯ শিশুকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


একটি সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এই পার্কে জামায়াতে ইসলামীর ২০০ নেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। তাঁদের সাংগঠনিক কাজে প্রায়ই তাঁরা এই নির্জন পার্ক ব্যবহার করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ‘স্বপ্নপল্লী’ নামে পার্কটিও একই কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পার্কের অবস্থান আরও নির্জন এলাকায়। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর এই পার্কে নাশকতার বৈঠকে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ব্যানার ও রান্না করা খাবার জব্দ করেছিল পুলিশ।


নাইস গার্ডেনের ব্যবস্থাপক মো. রেন্টু বলেন, ইউনিটেক কোচিং সেন্টারের দুজন শিক্ষার্থী পরিচয়ে ৬ মার্চের জন্য তাঁদের পার্কটি বুকিং দিয়েছিলেন। ঘটনার দিন রোববার সকাল সাতটায় তাঁদের বাবুর্চি এসে রান্না শুরু করেন। পরে তাঁদের বাস আসে। কিছুক্ষণ পর তাঁরা নাচোলে স্বপ্নপল্লীতে চলে যান। ফিরে এসে খাওয়ার কথা ছিল। পরে আর আসেননি।


কথিত বনভোজনে যোগ দেওয়া রাজশাহীর দুই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেল। তারা জানিয়েছে, এটা যে রাজনৈতিক কোনো সফর, তারা আগে বুঝতে পারেনি। কোচিং সেন্টারের বনভোজন বলে তারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা ব্যানার টানানো হয়। 



ওই দুই শিক্ষার্থী তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলে, শিবির নেতারা তাদের তালিম দিয়েছে যে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার নাম ইসলাম। 

তাদের সঙ্গে প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীও ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।


এক শিক্ষার্থী জানায়, 'শিবিরের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রতিদিন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন' দাবি করে লাবিব আবদুল্লাহ নামে এক শিবির নেতা তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আল্লাহ চান বাংলাদেশের শিশু কিশোররা যেন ছাত্র শিবিরে যোগদান করে এবং 'দলের জন্য মেহেনত করা' সকলের জন্য জান্নাতে রাজপ্রাসাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 


ছাত্র শিবিরের এমন অপতৎপরতা নতুন নয়। প্রতি বছর পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর মেধাবীদের সংবর্ধনার নামে নতুন সদস্য রিক্রুট করা হয়। এছাড়া জঙ্গিবাদ ও পতিতাবৃত্তির অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রী সংস্থার নেত্রীরাও ছাত্রীদের রিক্রুটের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে। 'নারী রাজনীতি ইসলামে হারাম' বললেও ছাত্রী সংস্থার সকল সভা ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় জামাত নেতাদের বাড়িতে। ছাত্রী সংস্থার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় নেত্রী আয়েশা খানম পদত্যাগ করেছিলেন। ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের কিভাবে মুতা বিবাহের নামে পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে তিনি কলামও লিখেছিলেন।


দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মাসিক আর্থিক সহযোগিতার নামে নেতাদের মনোরঞ্জন ও শিশুদের সমকামিতায় বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে শিবির ও ছাত্রী সংস্থার বিরুদ্ধে। গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার কথাও জানা যায়। 


রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্জন পার্কে তালিম দেয়ার মতো ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। শিশু বয়সে তাদেরকে এমনভাবে মগজ ধোলাই করা হয় যে পরবর্তীতে নবী-রাসুলগণের চেয়ে দলীয় নেতাদের বড় বলে মূল্যায়ন করে তারা। এছাড়া নবী, রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনাকেও তারা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গণ্য করে। অন্যদিকে দলীয় নেতাদের অপকর্মের তথ্য প্রমাণ পেয়েও অবিশ্বাস করে।


মাওলানা জিয়াউল হাসানের মতে, জামাত শিবিরের মূল কৌশল ব্রেইন ওয়াশ করা। আজহারির মতো জামাত সমর্থক ওয়াজিরা রাসুল (সা:), হযরত আলী, ওমর বা উম্মুল মোমেনীনদের নিয়ে সমালোচনা করে মূলত জামাত শিবির সমর্থকদের দলীয় ও ব্যক্তি আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য। 

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, খাদিজাকে বুড়ি বলার মতো ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়। এর ফলে সমর্থকরা আজহারির পক্ষে সাফাই দেয়া শুরু করে। কিন্তু উম্মুল মুমেনীনের অপমান হয়েছে কিনা তা তাদের কাছে বিবেচ্য হয় না। ফলে মনস্তাত্ত্বিক যে প্রভাব পড়ে তাতে পরবর্তীতে নবী রাসুলদের নিয়ে কৌতুক করা বা হযরত আলীকে মদ্যপ বললেও তারা সমর্থন দিয়ে যায় এবং তার পক্ষেই তর্ক চালিয়ে যায়। মওদুদীও এভাবেই তার অনুসারীদের কাছে নবীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও 'ভুল-ত্রুটিহীন ইমাম' হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছে।


জামায়াত শিবিরের কর্মকাণ্ডের ফলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধেরও চরম অবক্ষয় হবে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ। তাদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাদের কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা।

shibir-using-religion-to-kids%20