সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তারেক রহমানের চরিত্র ও বেড়ে ওঠা



তারেক রহমানের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ লালন, বর্বরতা ও নৃশংস মানসিকতা সম্পর্কে সকলেই অবগত। কিন্তু তার এই অধঃপতনের কারণ যে শৈশব থেকে উচ্ছন্নে যাওয়া তা অনেকেই অবগত নন।

মেজর জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন তার পুত্র তারেক জিয়াকে ক্ষমতার দাপটে ঢাকার সেইন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলে থার্ড গ্রেডে ভর্তি করে দেন। পরবর্তী কয়েক বছর তারেক স্কুলে গিয়ে ছেলেদের সাথে মারামারি, টিচার-ব্রাদারদের সাথে দূর্ব্যবহার, পড়াশুনায় অনিয়মিত হয়ে ফেইল করা ইত্যাদি কারণে প্রিন্সিপাল ব্রাদার থমাস ও ব্রাদার বায়ার্ড’র ব্ল্যাকলিস্টে পড়েন। মেজর জিয়াকে কয়েকবার তার ছেলের সম্পর্কে ওয়ার্নিং দেয়ার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তারেককে স্কুল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। 

তারেক রহমান সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠতে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর ভাষ্য অনুযায়ী স্কুলে পড়া অবস্থায় তারেক একাধিক বার ফেল করেছেন। এমনকি স্কুলের প্রগ্রেস রিপোর্টে তারেক তার বাবা জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষর নকলও করেছিলেন বলে জানান এই বিএনপি নেতা। তাকে কিছুদিন শাহিন স্কুলে, কিছুদিন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে পড়ানো হয়েছে। এভাবে দুই স্কুলে ভর্তি ও ভর্তি বাতিলের প্রক্রিয়া চলেছে।

পরবর্তীতে তারেক রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করা হয়। পড়ালেখায় অমনোযোগিতা ও কিশোর বয়সে ধুমপান ও ফেন্সিডিলের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় তারেককে বেল্ট দিয়ে পেটাতেন জিয়াউর রহমান। 

১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে ভর্তির অভিযোগে তার ভর্তি বাতিল হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তার পড়াশোনা আর হয় নি।

তারেক জিয়ার নারী কেলেঙ্কারী

তারেকের চরিত্র নিয়ে অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন ছিলো। তবে তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে মানুষদের মুখ বন্ধ রাখতে সক্ষম ছিলো জিয়া ও খালেদাপুত্র তারেক। তবে বেশিদিন মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে পারে নি সে।

তারেকের সঙ্গে প্রথম প্রেম ছিল নারায়নগঞ্জের শাহিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান খালেদা। এ অবস্থায় তারেকের অনুরোধে শাহিনাকে বিয়ে করেন মামুন। উল্লেখ্য, শাহিনা ও মামুনের মেয়ের সঙ্গে তারেক-কন্যা জাইমা রহমানের চেহারার অনেক মিল রয়েছে। তাদের জন্য কয়েকটি জায়গায় প্লট ও বাড়ি কেনা হয়েছে যৌথভাবে।

যাই হোক, শাহিনার পরিবর্তে তারেককে বিয়ে দেয়া হয় সাবেক সেনাপ্রধান আতিকুল ইসলামের মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু সে বিয়েও টিকে নি। অতঃপর জোবায়েদা রহমানের সঙ্গে তারেকের বিবাহ হয়।

গিয়াস আল মামুনের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’ এর মাধ্যমে বিভিন্ন মডেল, উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠকসহ নারী কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে যৌন হেনস্থার খবর কারও অজানা নয়। তাছাড়া এটাও মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিলো যে চ্যানেল ওয়ানে সুন্দরী নারীরা অযোগ্য হলেও চাকরি নিশ্চিত। কারণ, সেই সুন্দরী নারীরা হবে তারেক জিয়ার ভোগের বস্তু। তারেকের সাথে চ্যানেল ওয়ানের একাধিক নারী কর্মকর্তার যৌনকর্মে লিপ্ত হবার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে সেসকল নারীর বেশির ভাগই ইচ্ছাকৃতভাবে যায় নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানায়।

আলোচিত সংবাদ পাঠক ও অভিনেত্রী ফারহানা নিশো’র সাথে তারেকের অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানেন না এমন লোক পাওয়া কঠিক। ফারহানা ছিলো তারেক-মামুনের সবথেকে ঘনিষ্ঠ। ফারহানা নিশো তারেকের সাবেক প্রেমিকা ছিলো বলে গণমাধ্যমের পুরাতন খবরের মাধ্যমে নতুন করে জানা যায়। আর তারেকের অনুপস্থিতিতে ফারহানা মিডিয়াতে একটি চক্র হিসেবে কাজ করতো। ফারহানার সাথে তারেকের সকল প্রকার টাকা পয়সার লেনদেন করতেন এনটিভির সিইও মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর শ্যালকের বউ সাবরিনা। তারেক-ফারহানার টেলিকনফারেন্সও সাবরিনা ঠিক করে দেয়।

২০০৩ সালে তারেকের আমন্ত্রণে জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠী বাংলাদেশে আসেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিল্পাকে নিয়ে আসলেও সে সময় তাকে অল্প সময়ের জন্য স্টেজে দেখা যায়। জানা যায়, তারেকের খোয়াব ভবনে (গাজীপুরের বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পা শেঠীকে। পরবর্তীতে শিল্পা শেঠীর সাথে তারেকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খবর চেপে থাকেনি।

দেশের বরেণ্য নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা’র সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তারেক রহমানের। শিল্পী ফেরদৌস আরা’র স্বামী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। বগুড়া জেলা প্রশাসক ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের স্বামীর জন্য তদবির করতে গেলে ফেরদৌস আরা স্বভাবতই তারেক রহমানের খপ্পরে পড়ে যান। এক রাতের জন্য তারেক রহমানের কাছে এসে ফেরদৌস আরা বেশ কিছু দিনের জন্য বেড পার্টনার হয়ে পড়েন।

তারেকের আচরণগত সমস্যা

ছোটবেলা থেকেই জিয়া-খালেদা পুত্র তারেক কিছুটা বেয়াদব প্রকৃতির ছিলো। তাছাড়া পড়া না পারা ও অনিয়মের কারণে অনেকবার স্কুল পাল্টাতে হয়েছে তারেককে। দিনে দিনে তারেকের অনিয়ম-বেয়াদবিও তার বয়সের সাথে বড় হতে থাকে।

তারেক যে সব জায়গায় পড়াশুনো করেছেন সে সকল জায়গায় প্রথমদিকে নম্র-ভদ্র সেজে থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে যেতো। বাবা-মায়ের ক্ষমতার জোর দেখিয়ে বেয়াদবি করাই ছিলো তার নিত্য কাজ। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মারধোর করার অভিযোগও অনেক।


এমনকি জিযাউর রহমান সেনাপ্রধান থাকার সময় একাধিক সেনা কর্মকর্তার সাথেও বেয়াদবি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেনা প্রধানের ছেলের পরিচয়ে একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে অপদস্থ করেছে বলেও জানা যায়।

২০০৮ এর নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাথে জোট গঠন করতে গিয়ে আসন ভাগাভাগির এক পর্যায়ে এরশাদকে অপমান করেছিলো তারেক। ওই অপমানের কথা এরশাদ নিজের মুখে স্বীকার করেছিলেন। এরশাদ বলেন তারেক আলোচনার এক পর্যায়ে বলে, ‘আঙ্কেল if you dont come tommorow , we dont need you. ’। নির্বাচনী খরচের বিষয়ে তারেক এরশাদকে বলেন, ‘নির্বাচনের টাকা এমপিরা আমার কাছ থেকে নিবে, আপনা কে দিবোনা, আপনি ওদেরকে দিবেন না।’

দলের বিভিন্ন সিনিয়র নেতাকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণের কথা মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। এদিকে অযোগ্য হলেও খালেদার জেল হবার পর দলের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান পদ দখল করে তারেক জিয়া। সেটা নিয়ে অন্যান্য নেতাদের সাথে মতবিরোধ তো আছেই।

ভাষা বা কথা বলা নিয়ে তারেককে বেয়াদব উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তার। তারেক তার নিজ বক্তব্যে কোন রকম সম্বোধন ছাড়াই জাতির পিতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি নাম ধরে উল্লেখ করেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির এই নেতা তারেককে বেয়াদব বলেন। একই ব্যাপার নিয়ে বিএনপি নেতা প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ তারেককে ‘বিশ্ব বেয়াদব’ ঘোষণা করেন।