সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তারেকের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ


জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে ভাঙা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি দেখানো হয়। তাকে সততার মূর্ত প্রতীক বানানো হলো। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল, জিয়া পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। লঞ্চ, টেক্সটাইল মিলস, বিদেশে বাড়ি, ব্যাংক-ব্যালান্স- এগুলো হঠাৎ কোথা থেকে এলো? সততার মুখোশ পরিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সহানুভূতি আদায় করা হয়। হঠাৎ করে এত টাকার মালিক হলো কীভাবে? পুরো জিয়া পরিবার, অর্থাৎ খালেদা জিয়া, তারেক, কোকো সবাই শুধু অসৎ নয়, তারা চরম দুর্নীতিবাজ, জিঘাংসাপরায়ণ, ক্ষমতালোভী। আদালতে খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে এবং সাজা হয়েছে। তারা শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার মালিক হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তারেক রহমানের ১২ কোটি টাকা আটক করেছিল। আমরা ২০১২ সালে সেই টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসি। বাংলাদেশের কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর আট কোটি টাকা ফেরত দেয়। তারেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। আমেরিকার এফবিআই এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে। ২০১২ সালে এফবিআইর ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা ও ২১ কোটি টাকা জরিমানা হয়। একইভাবে লন্ডনের ঘধঃ ডবংঃ ব্যাংকে প্রায় ছয় কোটি টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা জব্দ করা হয়েছে। মামলা চলছে টাকা ফেরত আনার জন্য। এ ছাড়া বিশ্বের আরও অনেক জায়গায় খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকা ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এছাড়া বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি (বাড়ির ঠিকানা :স্প্রিং ১৪, ভিলা :১২, এমিরেটস হিলস, দুবাই), সৌদি আরবে মার্কেটসহ লন্ডনে অনেক সম্পত্তি রয়েছে।

দৈনিক যুগান্তরে ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত বিদ্যুৎ খাত ধ্বংসের ‘নায়ক’ তারেক-মামুন নামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এ খাতটি গত পাঁচ বছরই ছিল তারেক মামুন গংয়ের কাছে জিম্মি। বিদ্যুতের কংক্রিটের খুঁটির ব্যবসা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও মেরামতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায়, ওভার হোলিংয়ের নামে চুরি ইত্যাদির মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে তিনি কামিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। শুধু খুঁটির ব্যবসা থেকেই কামিয়েছেন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। জোট সরকার আমলে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে তার সিংহভাগই গেছে তারেক-মামুনের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের পকেটে। বিদ্যুতের অভাবে দেশে শিল্পোৎপাদন মারত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। মামুন গংয়ের লোভের কবলে দেশের বিদ্যুৎ খাত এবং শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হলেও তারেক-মামুনরা কেবলই মোটাতাজা হয়েছেন।

প্রথম আলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান গত পাঁচ বছরে বগুড়ায় সন্ত্রাসী ও নানা ধরনের অপরাধীদের দলে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। ওই সময়ে সংঘটিত অর্ধডজন খুনের মামলার আসামিরা বগুড়া বিএনপির নেতৃত্বে থেকে আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরছে তারেকের লোক পরিচয় দিয়েই। দৈনিক যুগান্তর ৮ মার্চ ২০০৭ সালে দুর্নীতির রাজপুত্র শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০২ সালের প্রথম দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে তাকে মনোনীত করা হয়। এরপর থেকে তারেক রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বনানীর হাওয়া ভবনে নিয়মিত বসতেন। সেখানে তিনি ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ দেন। বিদ্যুতের খাম্বাসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সরকারের বড় বড় কেনাকাটা ও তারেক রহমানের মাধ্যমে হয়েছে। তারেক রহমান ব্যবসায়ী বন্ধুদের মাধ্যমে বিনা প্রতিযোগিতায় সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। এমনকি মোটা অংকের টাকা মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ২০০৭ সালের ৫ জুনের পত্রিকায় তারেক ও কোকোর চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বাবর শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের প্রথম দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। বাবর বলেছেন, টিঅ্যান্ডটির একটি কাজ না দেওয়ায় কোকো একদিন বাড়িতে ভাঙচুর করেছিলেন। পরে ম্যাডাম টিঅ্যান্ডটি মন্ত্রী আমিনুল হককে ডেকে কোকোকে কাজটি দিতে বলেন। এই কাজ থেকে কোকো ও সাবেক অর্থমন্ত্রীর পুত্র বাবু এক কোটি ডলার কমিশন নেন।

অন্যদিকে জেএমবির পৃষ্ঠপোষকতা ও ঘুষ নিয়ে একটি হত্যা মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার মামলায় আসামি হিসেবে বাবরের সঙ্গী হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান। জিজ্ঞাসাবাদে বাবর আরও বলেন, পুলিশ বিভাগে ৮০ শতাংশ লোক নিয়োগ পেয়েছে টাকার বিনিময়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ মাহমুদ ও রাজশাহীর সাংসদ কবীর হোসেনের জামাতা বকুল এই টাকা তুলতেন। টাকা লেনদেনের এ বিষয়টি খালেদা জিয়াও জানতেন বলে বাবর জানান। বাবর বলেন, ম্যাডাম তারেক রহমানের কথাই বেশি শুনতেন। যে যাই বলুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তারেকের কথাই প্রাধান্য পেত ।

দৈনিক সমকালে ২০০৭ সালের জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন প্রতারণার মাধ্যমে গাজীপুর বন বিভাগের প্রায় ৭২ বিঘা জমি বরাদ্দ নিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গাজীপুর ভাওয়াল উদ্যানের পাশে এই জমি অন্যের নামে বরাদ্দ নিয়ে তারা প্রায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ওয়ান ডেনিস মিল ও ওয়ান স্পিনিং মিল স্থাপন করেছেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আপত্তি এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দেয়। তৎকালীন ভূমি সচিব আজাদ রুহুল আমিন ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতিবিঘা জমির দাম মাত্র সোয়া লাখ টাকার কিছু বেশি ধার্য করা হয়। তারপর বন কেটে গড়ে তোলা হয় টেক্সটাইল মিল।

আমার দেশ ২৫ মে ২০০৯ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য এবং ক্রয় ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ক সাব-কমিটির প্রধান শাহজাহান খান। এদিকে অনুষ্ঠিত সাব-কমিটির বৈঠকে তিনি অভিযোগ তোলেন, বিএনপির এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান সংসদ ভবনের কেউ না হওয়া সত্ত্বেও দলীয় কাজে ব্যবহারের জন্য সংসদ সচিবালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেছেন এবং সাংসদদের টাকায় এর জ্বালানি তেল নিয়েছেন। দৈনিক সংবাদ ২২ মার্চ ২০০৭ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র কিনতে দাউদের সাথে ডিল করেন খালেদা পুত্র।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১/১১-উত্তর দুর্নীতি দমন কমিশন তারেক-কোকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। এ পর্যন্ত ১২টি দুর্নীতির মামলা হয়েছে তারেকের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কাফরুল থানায় আদায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি তারেক রহমান ২০০২-০৩ করবর্ষ হইতে ২০০৫-০৬ করবর্ষের জন্য দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণীতে প্রদত্ত ঘোষণায় হলফনামার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রদান করিয়া আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা ১৬৫ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছেন এবং ২০০২-০৩ করবর্ষ হইতে ২০০৫-০৬ করবর্ষের জন্য বিভিন্ন খাত হইতে বিনিয়োগ/অর্জিত আয় বাবদ সর্বমোট ১,০৭,৪৭,১২৫ (এক কোটি সাত লাখ সাতচল্লিশ হাজার একশত পঁচিশ) টাকার তথ্য সংশ্লিষ্ট করবর্ষের জন্য দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণীতে গোপন করিয়া ও উহার ওপর প্রযোজ্য আয়কর ২৬,৮৬,৭৮১  (ছাব্বিশ লাখ ছিয়াশি হাজার সাতশত একাশি) টাকা ফাঁকি দিয়া আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা ১৬৬ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছেন! 

২৭ মার্চ ২০০৭ সালে গুলশান থানায় তারেকের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার এজাহারে বলা হয়, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও জনাব তারেক রহমান অন্যান্য সহযোগীসহ পরস্পর যোগসাজশে রেজা কন্সট্রাকশন লি. হতে জোরপূর্বক প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন, যা বাংলাদেশ দ. বি. ৩২১/৩২৬/৩২৭ ও ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের হয়। এই মামলাটিতে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালের ২৭ মার্চ গুলশান থানায় তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। গুলশান থানায় মামলার নম্বর ১০৩। এই মামলার এজাহারে বলা হয়, মার্শাল ডিস্টিলারিজের মালিকের কাছ থেকে তারেক রহমান জোরপূর্বক ৪৬ লাখ টাকা আদায় করেন। সিমেন্স কোম্পানিকে টেলিটক প্রজেক্টের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কয়েক কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলা চলছে। এফবিআইয়ের প্রতিনিধি দল এ নিয়ে দেশে এসে আদালতে সাক্ষীও দিয়ে গেছেন।

পাচার করা অর্থ ফেরত আসা সহ তারেকের দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ করে যে সব জেনেও খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি তার পুত্রদের না শুধরিয়ে উল্টো তাদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন।