সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তারেকের হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন - এক দুঃস্বপ্নের নাম


২০০১ সালের নির্বাচনের আগে দলীয় কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও চেয়ারপারসনের কার্যালয় হিসেবে বনানীতে ‘হাওয়া ভবন’ ভাড়া নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি করেন তারেক রহমান। নির্বাচনের পরও ওই কার্যালয় খোলা রাখা হলে ‘হাওয়া ভবন’ ঘিরে বিতর্ক আরো বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নানা দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সরকারের প্রধান কার্যালয় হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত ছিল হাওয়া ভবন। চাকরী, ব্যবসা, টেন্ডার, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, ভুয়া নামে ঋণ গ্রহণ, পদোন্নতি, বদলি থেকে শুরু করে মন্ত্রীত্ব নির্ধারণও হতো এ ভবন থেকে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে নির্বাচনী জরিপ ও দলীয় মনোনয়ন প্রদানসহ নানামুখি সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনা করায় সারাদেশে তা পরিচিতি লাভ করে। নির্বাচনে জয়লাভের পর ওই চক্রটি তারেক রহমানকে সামনে রেখে হাওয়া ভবনকে প্যারালাল সরকার পরিচালনার উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিকল্প একটি কার্যালয়ে পরিণত হয় হাওয়া ভবন। তারেক রহমান বিগত সরকার ও বিএনপির ভেতর একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন। হাওয়া ভবনকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের কিছু তরুণ মন্ত্রী-এমপির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় পৃথক একটি ‘মন্ত্রিসভা’।

এই ‘মন্ত্রিসভা’র সদস্যরা তারেক রহমানকে আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। এভাবেই তারেক রহমানকে প্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা হয়। মুগ্ধ তারেক রহমানও এদের পুরস্কৃত করেন একেকজনকে একেক ‘সেক্টরের’ দায়িত্ব দিয়ে।

এরমধ্যে তার মূল ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে, অর্থাৎ তিনি ‘অর্থমন্ত্রী’। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও প্রশাসনে দলীয় লোক নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলকে। সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পায় আশিক ইসলাম।

হাওয়া ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ দেয়া হয় জয়কে এবং বগুড়ার সন্তান নাইটকে প্রথমে তার ব্যক্তিগত সহকারী ও পরে আরেক ছাত্রদল নেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে দেয়া হয় এই পদ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক খোঁজ খবর তারেককে পৌঁছে দেয়ার জন্য সাবেক ছাত্রদল নেতা ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবালকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

এসব কর্মকর্তা তৎকালীন পাঁচ বছর তারেক রহমানের পাশাপাশি হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। একেবারে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় অনেকে। এদের মেধা, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানারকম অভিযোগ পেলেও মোটেও সেগুলো আমলে নিতেন না তারেক রহমান। উল্টো তার প্রশ্রয়ে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে। নিজেরা পরিণত হয়েছে টাকার কুমিরে। 

তারেক ও মামুনের বিলাসিতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য পরিচিতি পেয়েছিল গাজীপুরের খোয়াব ভবন। ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমান নিয়মিতই বন্ধু মামুনের সঙ্গে এখানে আসতেন বলে প্রতিবেশীদের ভাষ্য। এ খোয়াব ভবনে বসেই শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

বিএনপির ষড়যন্ত্রের আখড়া হিসেবে পরিচিত খোয়াব ভবনে গভীর রাতে প্রায়ই পতাকাবাহী গাড়ি আসা-যাওয়া করেছে। তারেক ও মামুন গং-এর প্রমোদ ভবন হিসেবে খোয়াব ভবন ব্যবহৃত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। দেশী মডেল ও অভিনেত্রী ছাড়াও ভারত থেকে অভিনেত্রীদের এনে জলসার আয়োজন করা হতো। তারেকের ব্যবসায়িক বড় ডিলগুলো খোয়াব ভবনেই হতো বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে এই হাওয়া ও খোয়াব ভবনই বিএনপির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায়। যার খেসারত আজও দিতে হচ্ছে বিএনপিকে।