সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিরোধী দল দমনে তারেক রহমান



২০০১ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আড়ালেই ছিলেন তারেক রহমান। সেসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপির রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে প্রথমবারের মতো রাজনীতির ময়দানে তারেক রহমানের আবির্ভাব ঘটে। নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে নতুন ‘জিয়া’ হিসেবে সামনে আসেন তারেক। এরপরের কয়েক বছরের ইতিহাস বিএনপি ও সরকারের ওপর তারেক ও তার সঙ্গী-সাথীদের আধিপত্য, ক্ষমতার ব্যবহার-অপব্যবহার, বিরোধী মত দমন, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগের ইতিহাস।

এক. ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যে নির্মমতার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিল দেশজুড়ে তার স্মৃতিচারণেও অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় আতঙ্কে। ২০০১-এর নির্বাচনের আগেই শুরু হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বাচন পরবর্তীকালে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ব্যাপার যেন সেই দুঃশাসনের সময় নিয়মিত হয়ে উঠেছিল। শিশু এবং বৃদ্ধাকেও ধর্ষণের শিকার হতে হয় সেই সময়। হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষ বাস্তুভিটা থেকে আশ্রয়হীন অবস্থায় পাড়ি জমায় পার্শ্ববর্তী গ্রামে, শহরের মহল্লায়। তারপরও জীবন রক্ষা হয়নি। অনেকে পাঁচ বছর ধরে বাস্তুভিটায় ফিরেও আসতে পারেনি। মানবতার এত বড় অসম্মান এদেশে স্বাধীনতার পর কখনও হয়েছে বলে জানা নেই। ২১ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন ২২ নেতা ও কর্মী। আহত হয়ে আজও যন্ত্রণায় কষ্টে আছে অনেকেই। দুঃশাসনের সেই সময় সন্ত্রাসী হামলায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া এমপি, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপিসহ অনেককে।

দুই. কেবল দেশীয় প্রতিপক্ষই নয়, নির্যাতনকারীদের তালিকায় বিদেশী দূতাবাস প্রধানরাও ছিলেন। উল্লেখ্য, তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে যে গ্রেনেড হামলা করা হলো তা সর্ব-বিচারেই ভয়াবহ।

তিন. ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে তৎকালীন সরকারের মদদপুষ্ট জেএমবি ক্যাডার আতাউর রহমান সানীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরীকে ২০০১ সালের ১৬ নবেম্বর সরকার-দলীয় সন্ত্রাসীরা তাঁকে নিজ বাড়িতে মাথায় গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।  ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনায় হত্যা করা হয় সদালাপী, সৎপ্রাণ, জনপ্রিয় সাংবাদিক মানিক সাহাকে। বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে। ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট খুলনায় হত্যা করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামকে। ২০০৩ সালের ৭ জুন বিএনপি সন্ত্রাসীদের চাইনিজ কুড়ালের উপর্যুপরি আঘাতে নিহত হন নাটোরের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য মনতাজউদ্দিন আহমেদ। একই বছর ১ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, টানা পাঁচ বছরের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সামসুল ইসলামকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করে । এ রকম অসংখ্য নৃশংসতার রক্তমাখা স্মৃতি যখনই মনে পড়ে তখনই শিউরে উঠতে হয়। 

চার. ২০০১ এর নির্বাচনে বিজয়ের পর পরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারাদেশে তাণ্ডব শুরু করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট মতে, “২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভোট না দেয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত জোট একের পর এক হামলা করতে শুরু করে, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলো যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারেরা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। নির্বাচনের পরের অবস্থা ছিলো আরো পরিকল্পিত, ছকবদ্ধ এবং গুরুতর। প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় সেসময় বিএনপি জোটের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিলো বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা ও নরসিংদী। ওই সময় আক্রমণকারীরা হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর, তাদের সম্পত্তি লুটপাট এবং অনেক হিন্দু নারীদের ধর্ষণও করে।”

পাঁচ. ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি জনগণের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছিল। তারা সে সময় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে। বিএনপির শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৮৩ জন, ২০০৩ সালে ৮১ জন, ২০০৪ সালে ২১০ জন, ২০০৫ সালে ৩৭৭ জন ও ২০০৬ সালে ৩৬২ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। 

বিএনপির সকল কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারেক রহমানের হাত ছিল। যার হাতে রয়েছে রক্তের দাগ, যার ভাবনায় রয়েছে বর্বর অত্যাচারে দেশ শাসনের খায়েশ; তাকে মানুষ কিভাবে সমর্থন করে তা ভাবতেও কষ্ট হয়! জাগতিক জগতের যাপিত জীবনে সাধারণ মানুষ হয়ত সাময়িক স্মৃতি বিস্মৃত হয় কিন্তু দুঃশাসনের সেই সময়ের মতো যদি গণমাধ্যম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে ভয়াবহ স্মৃতি চোখের সামনে তুলে ধরা যায় তবে মানুষ আর নিষ্ঠুরতার হাতে নিজেকে সঁপে দেবে না।