সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তারেকের পরিকল্পনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়!


স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর যেভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, ঠিক একই উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট চালানো হয়েছিল ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। এই বর্বরোচিত হামলার মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছিলেন তারেক রহমান এবং কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা

জবাবদিহিহীন আমানত রাখা, অর্থ পাচার ও লেনদেনের সহজ এবং নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিশ্বে সুইজ ব্যাংকের পরই সিঙ্গাপুরের ব্যাংকগুলোর স্থান। বিশেষত এ উপমহাদেশের কালো টাকার মালিকদের পছন্দ সিঙ্গাপুর। আইএসআই, জঙ্গীগোষ্ঠী ও দুবাইকেন্দ্রিক ভারতীয় ডনরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও সিঙ্গাপুরকেই বেছে নেন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে সিঙ্গাপুরে দাউদ ইব্রাহিম এবং আইএসআইয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গীগোষ্ঠীকে সহায়তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে মূল বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২১ আগস্ট হামলার পরিকল্পনা করা হয়। একটি থাইল্যান্ডকেন্দ্রিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে  ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অর্থ লেনদেন হয়।

২১ আগস্ট হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী। তাদের পরামর্শক্রমে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু তার ভাই মাওলানা তায়জউদ্দীনকে পাচারকৃত গ্রেনেড থেকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য কিছু গ্রেনেড রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশ মোতাবেক পাকিস্তান থেকে কলকাতার জঙ্গী গ্রুপ আসিফ রেজা কমান্ডো কোম্পানির জন্য আনা ৮ প্যাকেট আর্জেস-৮৪ গ্রেনেড থেকে দুটি প্যাকেট রেখে দেয়া হয় বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য। প্রতি প্যাকেটে গ্রেনেড থাকে ২৪টি। তৎকালে উলফা ও আসিফ রেজা কোম্পানির মাধ্যমে ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন, লস্করে তৈয়বাসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনে কাছে পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র সরবরাহ করা হতো।

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দল তথা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে কয়েকটি জঙ্গীগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাঠ পর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম ভূমিকা পালন করে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দীন। প্রাথমিকভাবে তাজউদ্দীন হরকাতউল জিহাদকে পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করে। পরবর্তী সময়ে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বাবর, নিজামীসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়। হামলা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় হুজির রাজশাহী জেলার প্রধান মুফতি হান্নানকে। এ হামলা বাস্তবায়ন হলে হুজিকে রাজনীতিতে আসার সুযোগ দেয়া হবে এই মর্মে হুজির আমির আবদুস সালামকে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিত এই হুজি তৎকালে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল।

২১ আগস্ট হামলার টেস্ট কেস হিসেবে হামলা করা হয়েছিল সিলেট মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর। এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল সকল হামলাকে জঙ্গী কর্মকাণ্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে উপস্থাপন করা।

তারেক রহমানের পাকিস্তান সফরের গুঞ্জন

বিভিন্ন সূত্রের প্রাপ্ত তথ্যে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে তারেক রহমান সিঙ্গাপুরে বসে হামলার পরিকল্পনা করেন বলে জানা গেলেও ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারেক বিজি-০০৭ বিমানে কোথায় গিয়েছিলেন তার সকল তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। ধারণা করা হয় সে সময় তিনি থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তান সফর করেছিলেন। তারেক ফিরে আসেন ২৩ বা ২৪ আগস্ট। ধারণা করা হয়, ২১ আগস্ট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারেক মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিতেন।

ভয়াল ২১ আগস্ট

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা ছিল।  কোন সমাবেশ অনুষ্ঠানের আগে গোয়েন্দারা সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন, তল্লাশি করেন; কিন্তু সেদিন কেউ আসেননি। শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ট্রাক-মঞ্চে ছিলেন; নেত্রী ভাষণ দেবেন। কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি। ইউনিফর্মে বা সিভিল পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্যও মঞ্চের আশপাশে ছিলেন না। তারা পার্শ্ববর্তী কোন ভবনেও অবস্থান নেননি, যা অস্বাভাবিক। নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় ভিডিও ক্যামেরায় কর্মসূচী ধারণ করে। সেদিন কোন ক্যামেরা আনা হয়নি।

সেদিন পুলিশের অবস্থান ছিল সমাবেশ স্থলের অনেক দূরে। শেখ হাসিনা আনুমানিক ৫টা ২১ মিনিটে বক্তব্য দেয়া শুরু করতেই হামলা হয়। মানবঢাল তৈরি করে নেত্রীকে আগলে রাখেন তার নেতাকর্মীরা। হামলার পর পুলিশ জিডি পর্যন্ত নেয়নি। পরদিন লোক দেখানো মামলা করা হয়। বহু আহতকে ভর্তি করা হয়নি হাসপাতালে। হামলার সমস্ত আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়। এমনকি সংসদে এ বিষয় উত্থাপন করা হলে স্পীকার আলোচনা বন্ধ করে দেন। জজ মিয়া নামে যে নাটক করা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত বলা নিষ্প্রয়োজন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জড়িত বিচ্ছিন্নতাবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রপন্থার শেকড়। সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে তারেক রহমান সহ হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী।