১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমান মূলত তদবীর, টেন্ডার ও ব্যবসাতেই মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে থেকে তারেক সক্রিয় হয়ে ওঠেন বিএনপিতে একক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে। এ সময় দলীয় কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও বনানীতে ‘হাওয়া ভবন’ ভাড়া নিয়ে ক্ষমতার নতুন বলয় সৃষ্টি করে। ক্ষমতায় আসার পর দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের পুরোদমে দলীয় ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরু করেন তারেক রহমান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারেক রহমানের আশ্বাসে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছিল মুফতি হান্নান। এ ব্যাপারে তত্কালীন প্রশাসনের প্রশাসনিক সহায়তাও পেয়েছিল জঙ্গিরা।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে এমপি কায়কোবাদের সহযোগিতায় হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পরিচিত হন জঙ্গিরা। এছাড়া জামায়াত শিবিরের সরাসরি ইন্ধনে তৈরি করা হয়েছিল বাংলা ভাই সহ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী।
সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিএনপি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং উগ্র মৌলবাদকে লালন করে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এখনো জঙ্গিবাদ এবং উগ্র মৌলবাদ বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপন সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু সেই সম্পর্কটি তাদের ভাষায় ‘ওপেন সিক্রেট’। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, জামাত এবং বিএনপি অভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। জামাতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত।
২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে বলা হয়, গ্রেনেড হামলা চালানোর হীন উদ্দেশ্য হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হুজি, হিজবুল মুজাহিদীন, লস্কর-ই-তৈয়বা, তেহরেকি জেহাদী ইসলাম, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের জঙ্গি কর্মকাণ্ড এদেশে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়া; স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এ ছাড়া অবস্থানগত ও ক্ষমতাগত লাভের উদ্দেশেও এখানে কাজ করেছে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়।
তারেক রহমান সম্পর্কে উইকিলিকস যা বলেছিল:
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারকে রহমান সম্পর্কে লেখেন। যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লিখেন:
“তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক।
তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্যকে, যথাঃ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং জঙ্গিবাদ নির্মুল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...... আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিদের মূল শক্ত করতে সহায়তা করেছে”
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সম্পর্কের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল।
২০০২ সাল থেকেই ভারত জানতে পারে, তারেক রহমানের সঙ্গে ভারতীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তাদের পেছনে পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থার মদদ রয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে নাশকতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে পাকিস্থানকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদেরকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহের মিশনে নামে হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমান। চট্টগ্রাম বন্দর এবং মোংলা বন্দরকে অস্ত্র চোরা কারবারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে যায়।
২০১১ সালে প্রকাশিত উইকিলিকসের আরেকটি নথিতে জানা যায় কীভাবে অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইয়ের খাস সাগরেদ কামারুলকে (মাহতাব খামারু) তারেকের টেলিফোন পেয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় র্যাব!
তারেক রহমান চেয়েছিলেন, জঙ্গিদের দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমণ করলে দায় দায়িত্ব বিএনপির ওপর পড়বে না। এ কাজে বাছাই করা জঙ্গিদেরকে পাকিস্থানে প্রশিক্ষণ প্রদান। এ নিয়ে প্রিন্স অব বগুড়া শিরোনামে তারেক রহমান কর্তৃক জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা এবং গ্রেনেড হামলায় সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রমাণসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় সিএনএন এবং ডেইলি স্টারে কর্মরত তাসনিম খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আরামে দিন কাটাচ্ছেন তারেক রহমান। সেখানে বসে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। অসাম্প্রদায়িক, শান্তিকামী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরীর পেছনে অর্থায়ন ও উসকানি দিচ্ছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য প্রধান হুমকি পাকিস্থানের আজ্ঞাবহ তারেক রহমানকে শীঘ্রই বাংলাদেশে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়নের দাবি সাধারণ মানুষের।