সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করেন খুনিদের পৃষ্ঠপোষক খালেদা জিয়া



১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশে খুনিদের শাসন কায়েম করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরই খুনিদের বিদেশে পলায়নের সুযোগ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু জাতি অবাক হয়ে দেখলো - বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রকে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দান করা হয়। সংবিধানকে কলঙ্কিত করে ন্যায়বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার ছিন্ন করা হয়। মোশতাকের জারি করা সেই ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া। 

’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ এবং হুদাকে এমপি বানান খালেদা জিয়া। খুনি রশিদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে সংসদকে কলুষিত করে খালেদা জিয়া। সে সময় ফারুক-রশিদ ঢাকায় নানা ধরনের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছিলো। 

অন্য খুনিদের মধ্যে ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ খালেদা জিয়ার শাসনামলে (১৯৯১-৯৬) কেনিয়া, হংকং ও ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত বা কনসাল জেনারেল পদে নিযুক্ত ছিলো।

ফারুক-রশিদ লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় ফ্রিডম পার্টির কর্মীদের লিবিয়া সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লিবিয়ায় কয়েক শ যুবককে ৩ থেকে ৬, এমনকি ৯ মাস পর্যন্ত সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লিবিয়ায় পিস্তল থেকে শুরু করে মেশিনগানসহ আধুনিক অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্যাডাররাই ছিল ফ্রিডম পার্টির প্রধান ভিত্তি। খুনি চক্রের কর্মকাণ্ড থেকে দেখা যায়, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশে-বিদেশে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসদ সদস্য হওয়া এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব কার্যক্রমের প্রকাশ্য সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র।

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর তার হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তারপরই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চক্রান্ত ও অপতৎপরতার পথ সীমিত হয়ে আসে। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। এরপর গ্রেফতার হয় কয়েকজন খুনি। বাকিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ১২ মার্চ আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তারিখে মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আপিলের পর আদালত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শুধু সুরক্ষা বা পুরস্কৃতই করেনি, আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খালেদা জিয়া দায়রা জজ আদালত কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন হরতাল পালন করে। 

আওয়ামী লীগের শাসনামলে  বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও খুনিদের বাঁচাতে ২০০১ সালে খালেদা ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ২০০৬ পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিলো। এমন কি আওয়ামী সরকারের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিচ্যুত কয়েকজন খুনিকে আবারো প্রমোশন দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন খালেদা জিয়া। জেল থেকে মুক্তি দিয়ে খুনি খায়রুজ্জামানকে সরাসরি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগের সময়ে জিম্বাবুয়েতে থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত ও পরবর্তীতে সেখানেই মারা যাওয়া আরেক খুনি আজিজ পাশাকে মরণোত্তর প্রমোশন দেওয়ার অবিশ্বাস্য নজির গড়া হয়েছে খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্দেশে।

অনেকেই খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কি কখনো বিবেচনা করে দেখেছেন শেখ হাসিনার হৃদয়ে কতটা রক্ত ক্ষরণ সৃষ্টি করা হয়েছিল! রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হৃদয়ের যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে। তবু শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পরিবারের আবেদনের পেক্ষিতে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তি ও পৃষ্ঠপোষকতা করে খালেদা জিয়া যে কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করেছিলেন তা জাতি কখনো ভুলবে না।