বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালানো কথিত কয়েকজন সাংবাদিকের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ৬ লাখ ডলার চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মের তথ্য ফাঁস করেছেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন।
প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে বেড়ানো কানাডা ভিত্তিক অনলাইন চ্যানেল নাগরিক টিভির টিটু রহমান, নাজমুস সাকিব, নেত্র নিউজের তাসনিম খলিল, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী জুলকারনাইন সামি এবং লন্ডন ভিত্তিক করাপশন ইন মিডিয়ার জাওয়াদ নির্ঝরের মুখোশ উন্মোচন করে আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের তৈরি করা দুটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট গুজব প্রচার করে ব্ল্যাকমেইল করার দুটি ফোনালাপও প্রকাশ করেছেন ইলিয়াস। এর আগে কথিত সাংবাদিক তাসনীম খলিলের জালিয়াতি উন্মোচন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন ইলিয়াস। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশে বসে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে গুজব ছড়িয়ে চাঁদাবাজি করাই এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য। ইলিয়াস নিজে উবার চালিয়ে আমেরিকাতে জীবনযাপন করলেও, এই চক্রটি দীর্ঘদিন বিদেশে কোন কাজ না করেও প্রতারণার টাকায় রাজকীয় জীবন যাপন করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
দেশের বিশিষ্টজনদের ব্ল্যাকমেইল করায় সহযোগী হিসেবে কাজ করছে লন্ডনের করাপশন ইন মিডিয়ার জাওয়াদ নির্ঝর ও ভুয়া সাংবাদিক সামি।
ইলিয়াস হোসেন লাইভে এসে বলেন, এদের মূল কাজ হচ্ছে ধান্ধাবাজি। ইলিয়াস হোসেনের প্রচারিত ফোনালাপে শোনা যায়, বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা গোলাম ও নাগরিক টিভির নাজমুস সাকিব টাকা পয়সার পরিমান নিয়ে কথা বলছেন। তাদের মধ্যে লেনদেনের মধ্যস্থতা করছেন লন্ডন অবস্থানকারী জালিয়াত জাওয়াদ নির্ঝর। তারা বসুন্ধরা গ্রুপের আনভীরের কাছে ৬ লাখ ডলার তথা সাড়ে ৫ কোটি টাকা দাবী করেছেন।
উল্লেখ্য,এর আগে নাজমুস সাকিব এবং জাওয়াদ নির্ঝর মিলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করেন বলে জানা যায়। তবে এই চক্রটি একইভাবে এস আলম গ্রুপ, ইউ এস বাংলা গ্রুপের আব্দুল্লাহ আল মামুন, নাসাগ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার, গান বাংলার তাপস, থারমেক্স গ্রুপের কাদির মোল্লা, প্রধান মন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব সাংবাদিক আশরাফুল আলম খোকন, পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকেই তারা তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইলিয়াস হোসেন বলেন, এই চক্রটি আনভীরের সাথে প্রথমে লন্ডনে মিটিং করে। এই রকম দুটি ছবিও আমাদের হাতে এসেছে। একটি ছবিতে নেত্র নিউজের তাসনীম খলিল ও আল জাজিরার সাংবাদিক পরিচয়দানকারী জুলকারনাইন সামি এবং আরেকটি ছবিতে নাগরিক টিভির টিটু রহমান ও নাজমুস সাকিবকে একসাথে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায়। দুটি আলাদা ছবিতেই তাদের সাথে আছেন লন্ডনের করাপশন ইন মিডিয়ার জাওয়াদ নির্ঝর। সম্পূর্ণ ভিডিওটি পর্যালোচনায় স্পষ্টই বুঝা যায়, এই নির্ঝরই এদের চাঁদাবাজির টাকা পয়সার মধ্যস্থতা করে থাকেন। তার সাথে দেশে অবস্থানকারী একটি চক্র এই জালিয়াতিতে যুক্ত, যারা মূলত দেশ থেকে টাকা পয়সার লেনদেন করে থাকেন।
আনভীরের সাথে ফোনালাপের কথা নাজমুস সাকিব নিজেও তা স্বীকার করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা গোলামের সাথে থ্রী ওয়েতে ফোনে কথা বলার সময় সাকিব ও নির্ঝর দুই ঈদের জন্য বোনাস দাবি করেন। তারা জানিয়ে দেন ৬ লাখ ডলারের কম এক টাকা হলেও তারা অপপ্রচার বন্ধ করবেন না।
এই প্রতারক চক্রটির সাথে ওয়ান ইলেভেনের খলনায়ক মেজর জেনারেল বারীর জড়িত থাকার কথাও নাজমুস সাকিব ফোনালাপে নিজেই উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, বিদেশ থেকে দেশ বিরোধী প্রচারণার একটি চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। “এসকে মিডিয়া” নামের একটি গ্রুপ এ চক্রের মূল হোতা হিসাবে কাজ করছেন। আমেরিকা, কানাডা ও লন্ডন থেকে এই একটি প্লাটফর্ম ব্যাবহার করেই বিভিন্ন ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী সম্মেলিত ভাবে দেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডা থেকে নাগরিক টিভি, লন্ডন ও ইউরোপ থেকে ডেভিড বার্গম্যান , তাসনীম খলিল ও জুলকারনাইন সামি, করাপশন ইন মিডিয়া ও জাওয়াদ নির্ঝর, মেজর দেলোয়ার, ব্রিঃ শাহিদ এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
গোয়েন্দারা খুঁজতে গিয়ে দেখেছেন তারা বিভিন্ন দেশ থেকে অপপ্রচার-গুজব প্রচার করে চরিত্র হনন করলেও নেপথ্যে সবাই একই প্লাটফর্ম ব্যাবহার করছেন। এই অপপ্রচারকারীরা সবাই এক সূত্রে গাঁথা, এসকে মিডিয়া নামের একটি রাইট ম্যানেজার ব্যাবহার করে ইউটিউব ও ফেসবুক –এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকার এই বিষয়ে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলকে তথ্য দিয়েছে।
জানা যায়, এই সব অপপ্রচারকারীরা তাদের দেশবিরোধী সকল ভিডিও ও যাবতীয় কন্টেন্ট প্রথমে এসকে মিডিয়ার কন্টেন্ট হিসাবে ইউটিউব ও ফেসবুক- এ আপলোড দেয়। এ ‘এসকে মিডিয়া’ কোটি টাকা খরচ করে Youtube ও Facebook এর রাইট ম্যানেজার সুবিধা কিনে নেয়। যার ফলে, এই রাইট ম্যানেজার সুবিধার কারনে এদের কন্টেন্ট গুলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গুরত্ব দিয়ে প্রচার করে থাকে।