সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ কি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?

শনিবার (৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনারের ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৫০ জন। জামাত-শিবিরের 'স্বর্গরাজ্য' হিসেবে পরিচিত সীতাকুণ্ডের এই দুর্ঘটনা নাশকতা, নাকি প্রতিপক্ষ দ্বারা ইচ্ছাকৃত অনিষ্টসাধন (স্যাবোটাজ) তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৩ সাল থেকে সীতাকুণ্ডে বিএনপি জামাতের সরকার বিরোধী কার্যক্রমের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল অগ্নিসংযোগ ও আগুন সন্ত্রাস। গত দশ বছরে সীতাকুণ্ডে রাজনৈতিক বিরোধিতার জের ধরে ১৫০০ এর অধিক সংখ্যক বার বাড়িঘর/অফিস বা যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে । এক হাজারের বেশি  নারকীয় তাণ্ডবের ঘটনায় মামলা হয়েছিল। এসব ঘটনায় বিএনপি ও জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট থাকলেও, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। সীতাকুন্ডের অনেক বড় বড় আওয়ামীলীগ নেতার ছেলে, কারো ভাই, কারো ভাগ্নে জামাত-শিবির করায় অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গ্রেফতার ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা হতে পারে বলে স্থানীয়দের অনেকে ধারণা করছেন। পদ্মাসেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে উচ্ছাস ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে তা ম্লান করে দিতে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে জামাত শিবির বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। নাশকতার নাটের গুরু হিসেবে পরিচিত এডভোকেট মোস্তফা নুরের বাড়িমু রাদপুরে হলেও তাকে সম্প্রতি সোনাইমুড়ী এলাকায় দেখা গেছে। গত এক সপ্তাহ যাবত শিবিরের সাবেক উপজেলা সভাপতি রবিউল হোসেন, কুতুবুদ্দিন শিবলী ও ভিপি ইমন সহ কয়েকজন নাশকতা মামলার আসামি নিয়ে মোস্তফা নুরকে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

সীতাকুণ্ডের ব্যবসায়ী ও জামাতের ডোনার কামাল উল্লাহ এবং সীতাকুণ্ড পৌরব্যবসায়ী কমিটির সেক্রেটারী বেলাল হোসেনকে এ ঘটনার জন্য অনেকে সন্দেহ করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর কামাল ও বেলাল, জামাত নেতা আনোয়ার সিদ্দিক, মোস্তফা নুর, এডভোকেট সরোয়ার হোসেন লাভলু ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। সীতাকুণ্ড সহ চট্রগ্রামের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা সৃষ্টিতে কলকাঠি নাড়েন লাভলু ও মোস্তফা নুর। তাই সবকিছু বিবেচনায় আনলে কনটেইনার ডিপোর ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে ১৩ বছরেরও বেশি সময়। এই সময়ে দেখা গিয়েছে যখনই কোনো ভালো কিছু করতে গিয়েছে এই সরকার তখনই কোনো না কোনো ভাবে সেটাকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য একটি মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। যেমন পদ্মা সেতু তৈরির শুরু হওয়ার আগেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে পদ্মা সেতু তৈরিই হুমকির মুখে পড়ে যায়। এই কারণে প্রায় ২ বছর পদ্মা সেতুর কাজও বন্ধ রাখা হয়। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় যে, দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছিল সেটি মিথ্যা। এরপর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চাইলেই বাংলাদেশ নিজ অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। আজ পদ্মা সেতু আর কল্পনা নয়, বাস্তব। আগামী ২৫ জুন এই সেতুর উদ্বোধন হবে। ফলে এই সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে একটি নাশকতার ছক হচ্ছে এটি অনেক আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিলো। সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর এই ঘটনা সেই নাশকতারই বাস্তবায়ন কিনা সেটি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।