ফেসবুকে ‘বিভ্রান্তিকর’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ওয়ার্কপারমিট নবায়ন না করায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, জাকির হোসেন খোকন নামের ওই ব্যক্তি ১৯ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নির্মাণ খাতে কর্মরত ছিলেন।
৪৩ বছর বয়সী জাকির শুরু থেকেই সেখানে ফেসবুকে লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে দুটো গ্রুপও তৈরি করে সরকার বিরোধী বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাতেন তিনি।
বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে জাকির জানান, গত ২৪ মে তার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, তার কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ এবং সেটা আর নবায়ন করা যাচ্ছে না।
জাকির বলেন, ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন কর্তৃপক্ষ তাকে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর সরকারের একটি সংস্থায় ‘বিরূপ রেকর্ড’ থাকায় তার কাজের অনুমতি আর বাড়ানো হয়নি।
সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন জনশক্তি মন্ত্রী জোসেফাইন টিও বলেছিলেন, যদি ‘খারাপ রেকর্ড’-এর কারণে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে না দেওয়া হয়, তবে সেই কর্মীকে তার অপরাধ সম্পর্কে অবগত করা হবে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
জাকিরের বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রণালয় জানায়, তিনি ১৯ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। ওই সময়ে তিনি প্রায়ই অভিবাসী শ্রমিকদের সম্পর্কে লিখেছেন।
“কিন্তু, যখন কোনো পাবলিক পোস্ট বিভ্রান্তি, মিথ্যা অথবা উসকানিমূলক তথ্য ছড়ায়, আমরা সেগুলো আলাভাবে দেখি।”
২০২১ সালের অক্টোবরে মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে একটি ডরমিটরিতে প্রবাসী কর্মীরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। ওই ঘটনায় দাঙ্গা পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়েছিল, যা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন জাকির।
প্রবাসী কর্মীদের ডরমিটরিতে নিম্নমানের খাবার, সুযোগসুবিধার অভাব, কোভিডে আক্রান্ত কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবাক কেন্দ্রে নিতে বিলম্বের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল কর্মীরা।
দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, সে সময় এক ফেইসবুক পোস্টে জাকির সিঙ্গাপুরে অভিবাসী কর্মীদের ‘শ্রমদাস’ এবং ডরমেটরিগুলোকে ‘শ্রমিকের খোয়াড়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সৈন্যবাহিনী ও সাঁজোয়া যান ডরমেটরিটি ঘিরে রেখেছে বলেও সেই পোস্টে তিনি দাবি করেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, “ওই ঘটনার বর্ণনাটি মিথ্যা ছিল। সেখানে কোনো সৈন্য বা সাঁজোয়া যান ছিল না।”
কর্তৃপক্ষ বলছে, জাকিরের বক্তব্য ওই ডরমিটরি ও অন্যান্য এলাকার অভিবাসী কর্মীদের উসকে দিতে পারত, আর সেক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারত।
অন্যদিকে জাকির বলছেন, যে বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেছেন, তা ‘নতুন কিছু নয়’। আর কোভিড মহামারী শুরু পর থেকে অনেকেই সামাজিক সমস্যা, অভিবাসী বা স্থানীয়দের সঙ্কট নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
“আমি কেবল এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, কারণ আমার চারপাশে সেগুলো ঘটতে দেখেছি। এগুলো অসহনীয়। জনাকীর্ণ ডরমিটরির কারণে আমি নিজেও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং একাধিকবার কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম।”
তিনি বলেন, “দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরই আমার বাড়ির মত। আমি চাই এই দেশটা আরও ভালো করুক। এজন্য সিঙ্গাপুরকে তার জনগণ, এমনকি অভিবাসীদের কথাও শুনতে শিখতে হবে।
“আমি কথাগুলো বলেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হতে পারে। আমি এই দেশকে ভালোবাসি। আমি চেয়েছিলাম সিঙ্গাপুর যেন অন্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হয়।”
জাকির তার ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করলেও তার নিয়োগকর্তা তা করেননি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সিঙ্গাপুরে একজন বিদেশির কাজ করার সামর্থ্য তার অধিকার নয়। জাকিরকে দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে অ্যাক্টিভিজম করেছেন।
“তার পাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে তার আর চাকরি না থাকায় সেখানে থাকার মেয়াদ তিনি বাড়াতে পারবেন না।”