বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের বাদশাহী ছিল মাত্র ৮৩ দিনের। জিয়া ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হলেও ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট থেকেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হাস্যকর নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল নবগঠিত বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। প্রথম অধিবেশনেই সংসদকে কলঙ্কিত করে স্থাপিত হয় এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। সংশোধনী পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায়।
অর্থাৎ খন্দকার মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেওয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ অগাস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যেন ব্যবস্থা না নিতে পারে পাকাপাকিভাবে সে ব্যবস্থাও করে দেন।
প্রশ্ন হতে পারে জিয়া কেন এটা করলেন? এতে তার কী স্বার্থ? উত্তর হচ্ছে, জিয়া জানতেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তার সংশ্লিষ্টার বিষয়টিও আর গোপন থাকবে না। তাই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি সংবিধানে জুড়ে দিয়ে এই প্রচারও চালানো হয় যে, যেহেতু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে তাই এই আইন আর পরিবর্তন বা বাতিল করা যাবে না।
জিয়াকে তার বর্বরতার মূল্য দিতে হয় নির্মমভাবে জীবন দিয়ে।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি কিংবা উদ্যোগও নেননি। তারা হয়তো এটা বুঝতে পারেননি যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে এবং খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। ইতিহাসের প্রতিশোধ বড়ই নির্মম হয়ে থাকে।