সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

জাফর আলমের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার সম্পদের তথ্যগোপনসহ অভিযোগের পাহাড়

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাবেক এমপি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, দখলদারি, হলফনামায় শতকোটি টাকার সম্পদ তথ্যগোপনসহ অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছে। এতদিন প্রাণের ভয়ে চুপ থাকলেও সম্প্রতি ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। জাফর আলমের বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও ইসিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পেকুয়ার একটি পথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অসৌজন্যমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে জাফর আলমকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। সাত দিন সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিলে জাফর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। এরপরই জাফর আলমের অন্যায় অত্যাচার নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জাফর আলম ও তার দখলদার বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় প্রতিষ্ঠিত স্কুলঘর জবরদখল করেছে। পরে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অবৈধ ভাবে বিক্রি করেছেন। এখানে কারো দোকান, মৎস্য ঘের দখল, বসতভিটাসহ ঘর দখল করে পথে বসানো হয়েছে তাদের। এতদিন জাফর আলম এমপি থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস না করলেও চলমান সময়ে সুযোগ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা অধিকার ফিরে পেতে সোচ্চার হয়েছেন বলে দাবি তাদের।

চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মামুনুল করিম বলেন, আমার মালিকানাধীন রামপুর মৌজার চিংড়ি ঘেরটি জাফর আলম এমপি হওয়ার পরপরই তার ভাইপো জিয়াবুল, ভাগিনা মিজান, জামাল চেয়ারম্যানের বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নেন। আমার ঘের ফেরত দেওয়ার কথা বলে নগদ ২২ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। এরপরও আমাকে ঘেরটি ফেরত দেননি। যন্ত্রণা-দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে বর্তমানে প্যারালাইজড হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।

মাষ্টার আবু হানিফ বলেন, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় পূর্বে প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন একাডেমি এমপি জাফর আলম বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পর তার অনুসারীদের দিয়ে একই নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন।

ইমাম উদ্দিন পাড়ার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী খুরশিদা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি এমপির বাড়ির পাশে। জাফর আলমের নির্দেশে স্থানীয় ভূমিদস্যু রফিক ও আমিনরা আমাদের পৈতৃক জমিতে নির্মাণ করা দোকানঘর দখল করে নিয়েছেন।

বিএমচর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মেম্বার বলেন, এমপি জাফর আলমের নির্দেশে আমাদের ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এলাকার একাধিক মানুষের ঘরবাড়ি দখল ও তাদের দীর্ঘদিনের ভোগ করা জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের পথে বসিয়েছেন। আমি এমপি জাফরের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে ও ইউনিয়ন ওলামা লীগের সভাপতিকে মামলার আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে।

চকরিয়া-পেকুয়া এলাকার দুই শতাধিক ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ অবিলম্বে ভূমিদস্যু ও জোরপূর্বক দখলকারী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

এদিকে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যগোপনের অভিযোগও উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের বিরুদ্ধে। হলফনামায় সম্পদের উল্লেখ করলেও ১১০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। 

গত পাঁচবছরে সংসদ সদস্য জাফর আলমের সম্পদ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। বেড়েছে তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পরিমানও। সবচেয়ে সম্পদ বেড়েছে স্ত্রী শাহেদা বেগমের। ইতোমধ্যে নানা অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যা গত পাচ বছরের তুলনায় দশ গুণ বেশি।

জাফর আলম ও তার পরিবারের নামে একাধিক জমির দলিল থাকা সত্বেও ওইসব দলিলের বিপরীতে সম্পদের পরিমান উল্লেখ করেননি। পেকুয়া মৌজায় তার নামে ৬টি জমির দলিল সম্পাদন হয়েছে। এরমধ্যে ২০-১০-২০ সালে দলিল নং ১৯১৮, ১০-১১-২০২০ সালে দলিল নং ১৯৮৮, ২৯-১০-২০ সালে দলিল নং ১৯২১, ২৩-১১-২০ সালে দলিল নং ১৯৭৯, ২৩-১২-২০ সালে দলিল নং ১৯১৯, ২৮-১২-২০ সালে দলিল নং ১১৮০। এসব সৃজিত দলিলের বিপরীতে পেকুয়া মৌজায় ৮৫.৬২ শতক জমি রয়েছে। এই জমির উপর পেকুয়া কবির আহমদ বাজারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। যার নাম পেকুয়া নিউ মার্কেট। ওই জায়গার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। মগনামা মৌজায় রয়েছে ১৯৫.১২ শতক জমি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি। নির্বাচনী হলফনামায় প্রায় ১১০ কোটি টাকার সম্পদ উল্লেখ করেনি জাফর আলম।

উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ২৪ আগস্ট জাফর আলম, তার স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন ও মেয়ে তানিয়া আফরিনকে তলব করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। গত ৪ সেপ্টেম্বর জাফর আলমসহ অভিযুক্ত চারজন দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে শুরু করেন। অনুসন্ধানে এমপি জাফর আলম ও তার স্ত্রীসহ সন্তানদের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক জমির দলিলের সত্যতা পায় দুদক। 

এছাড়া জাফর আলমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।