সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কেএনএফের পক্ষ নিয়ে বিএনপির সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতি


বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) দীর্ঘদিন ধরে গ্রেটার কুকি ল্যান্ড নামে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসাবে পাহাড়ে সন্ত্রাস, ব্যাংক ডাকাতি, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলাসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এই সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী।

বম জনগোষ্ঠির শতভাগ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী থাকলেও কেউ ধর্মীয় কোনো পরিচয় বা ইস্যুকে ব্যবহার করে না। কিন্তু কেএনএফ প্রকাশ্যে নিজেদের ধর্মীয় পরিচিতি ঘোষণার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরির চেষ্টা চালিয়ে থাকে। সেনাবাহিনী বাইবেল পুড়িয়েছে বলে বানোয়াট অভিযোগ তুলে প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রচার করে কেএনএফ। এছাড়া মসজিদে মুসল্লিদের জিম্মি করে উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টাও তারা করেছে। সবচেয়ে আপত্তিকর হচ্ছে, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান বা অন্তর্দলীয় সংঘাতে নিহত সদস্যদের কেএনএফ প্রকাশ্যে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিয়ে বিশ্বের খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র ও সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালায় কেএনএফ। তাই আল কায়েদা বা জেএমবিকে যেমন জঙ্গি (মুসলিম) সংগঠন আখ্যা দেয়া হয়, অনুরূপভাবে কেএনএফকেও একটি খ্রিস্টান জঙ্গি সংগঠন বলা যায়। 

মাত্র দুই বছরের মধ্যে কেএনএফের এই ভয়াবহ উত্থানের নেপথ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু খ্রিস্টান মিশনারি ও এনজিওর ভূমিকা আছে বলে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। ভারতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নজরদারি এবং অনুসন্ধানও চালাচ্ছে সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের আলোকে অভিমত দিয়েছেন যে, এ অঞ্চলে একটি খ্রিস্টান বাফার রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চক্রান্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পাহাড়ে একটি খ্রিস্টান বাফার রাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে ক্ষমতার জন্য মরিয়া বিএনপি দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে চলমান এমন একটি ভয়াবহ চক্রান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের পক্ষ নিয়ে বগুড়ার দুই বিএনপি নেতা নিজেদের খ্রিস্টান ধর্মীয় পরিচিতি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। 

এর আগে কেএনএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক লোঙ্গা খুমি ও বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (জেরি গ্রুপ) কেএনএফের পক্ষে ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। এবার তারা মাঠে নামিয়েছে বিতর্কিত ও গ্রহণযোগ্যতাহীন দুই নেতাকে। এদের একজন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি এলবার্ট পি.কস্টা। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী নাগরিক সমাজ নামের অপর একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি বলেও পরিচয় দেন। অপর নেতার নাম পবিত্র প্রামানিক। তার পিতা মুসলিম থেকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। বগুড়া জাতীয়তাবাদী হকার্স দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পবিত্র প্রামানিক একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। অটোরিকশা চালিয়ে এবং বিভিন্ন পত্রিকার হকার এজেন্ট হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। 

এলবার্ট পি.কস্টা নামসর্বস্ব বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের পার্বত্য এলাকার একটি অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্রের কথা বললেও, এলবার্ট এটিকে বাংলাদেশকে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর বক্তব্য বলে দাবি করেছেন। 

বম জনগোষ্ঠীর কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে কেএনএফ গঠন করা হলেও কেএনএফের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী কেএনএফকে সমর্থন করে না। তারা প্রকাশ্যে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এছাড়া কেএনএফ চরমভাবে বাঙালি, চাকমা ও মারমা বিদ্বেষী। এমন একটি সংগঠনের পক্ষে বিএনপি কেন অবস্থান নিয়েছে তা রহস্য ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কথিত নামসর্বস্ব এই সংগঠন কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও খ্রিস্টান ধর্মীয় পরিচিতি অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কখনো কোনো বিবৃতি না দিলেও, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যভিত্তিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। সুস্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে এ সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি এখন খ্রিস্টান ধর্মকে ইস্যু বানিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর তাবেদারি করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে বিএনপির এই ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদ করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।